ঢাকা | বঙ্গাব্দ

পরবর্তী পদক্ষেপে ইউরোপ

ইউক্রেনে রুশ-নিয়ন্ত্রিত দু’টি অঞ্চলের সম্পূর্ণ দখল রাশিয়াকে ছেড়ে দেওয়া হবে, যার বিনিময়ে রাশিয়া আরও দু’টি অঞ্চলে যুদ্ধ বন্ধ করবে।
  • অনলাইন ডেস্ক | ১৭ আগস্ট, ২০২৫
পরবর্তী পদক্ষেপে ইউরোপ ফ্রান্স, জার্মানী ও যুক্তরাজ্য।

ফ্রান্স, জার্মানী ও বৃটেনের নেতৃবৃন্দ রোববার একটি ভিডিও কলে যোগ দিচ্ছেন। তথাকথিত ‘কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’ জোটের সদস্য হিসেবে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করা নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যে তারা এ বৈঠকে অংশ নেবেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলাস্কা বৈঠকে ট্রাম্প ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ার প্রেক্ষিতে বৈঠকে বসার এ উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। খবর এএফপি’র।


আলাস্কা বৈঠকের আগে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অন্যতম মূল দাবি ছিল ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি। আবার ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্রদেরও এই শীর্ষ বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।


এদিকে এই বৈঠক থেকে কোনও সুস্পষ্ট সমাধান না আসায় ট্রাম্প ইউক্রেনে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির মতো কোন সমাধানে যেতে পারেননি। এ কারণে এটি পুতিনের পক্ষেই যায়, কারণ তিনি দীর্ঘদিন ধরে একটি চূড়ান্ত শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনার পক্ষে যুক্তি দিয়ে আসছেন। ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা এর সমালোচনা করে বলেছে, এটি মূলত সময় নষ্ট করা এবং যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার দখলদারিত্ব বাড়ানোর একটি কৌশল।


আলাস্কা থেকে ওয়াশিংটনে ফেরার পথে ট্রাম্প জেলেনস্কি এবং ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তিনি বলেন, ‘সবাই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে এই ভয়াবহ যুদ্ধ শেষ করার সর্বোত্তম উপায় হলো সরাসরি একটি শান্তি চুক্তিতে যাওয়া, যা যুদ্ধের অবসান ঘটাবে।’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্প আরও বলেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি ‘অনেক সময় কার্যকর হয় না।’


এদিকে সোমবার ওয়াশিংটন সফরে যাবেন জেলেনস্কি। তিনি ট্রাম্পের এই অবস্থান পরিবর্তনে সন্তুষ্ট নন। সামাজিক মাধ্যমে জেলেনস্কি বলেন, ‘হামলা বন্ধে মস্কোকে যদি সাধারণ নির্দেশনাগুলো মানানো না যায় তবে প্রতিবেশীদের সঙ্গে দীর্ঘ যুগ ধরে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার মতো বড় লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য রাশিয়াকে রাজি করানো অনেক কঠিন হবে।’


আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এএফপি জানায়, ট্রাম্প জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ফোনালাপে পুতিনের একটি প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। প্রস্তাবটি ছিল, ইউক্রেনে রুশ-নিয়ন্ত্রিত দু’টি অঞ্চলের সম্পূর্ণ দখল রাশিয়াকে ছেড়ে দেওয়া হবে, যার বিনিময়ে রাশিয়া আরও দু’টি অঞ্চলে যুদ্ধ বন্ধ করবে।


ওই সূত্র জানায়, পুতিন ‘কার্যত ইউক্রেনকে দোনবাস ছেড়ে দিতে চাপ দিচ্ছেন।’ দোনবাস হলো পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল নিয়ে গঠিত একটি এলাকা। এর বিনিময়ে, রুশ বাহিনী খেরসন ও জাপোরিঝিয়া প্রদেশের কৃষ্ণসাগর বন্দর এলাকায় তাদের আক্রমণ থামিয়ে দেবে, যেখানে প্রধান শহরগুলো এখনও ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।


ইউক্রেনে পুরোদমে আক্রমণ শুরু করার কয়েক মাস পর, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রাশিয়া চারটি ইউক্রেনীয় অঞ্চলকে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করে। যদিও তাদের সেনারা এখনও কোনোটিই পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। সূত্র আরও জানায়, ‘ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট দোনবাস ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।’


ট্রাম্প বিশেষভাবে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে প্রস্তুত। জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস এই আশ্বাসকে ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ হিসেবে প্রশংসা করেন। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)’র শীর্ষ কূটনীতিক কাজা কালাস আলাস্কা বৈঠকের ফলাফলের সমালোচনা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, পুতিন আলোচনাকে দীর্ঘায়িত করতে চাইছেন, কিন্তু রক্তপাত বন্ধ করার কোনো প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন না। কালাস বলেন, ‘কঠিন বাস্তবতা হলো, রাশিয়ার কোনও ইচ্ছে নেই এই যুদ্ধ শিগগিরই শেষ করার।’


এখন মূল কূটনৈতিক মনোযোগ সোমবার হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির আলোচনার দিকে। ইইউ’র একটি সূত্র এএফপিকে জানিয়েছে যে বেশ কয়েকজন ইউরোপীয় নেতাকেও এই বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।


সূত্র: এএফপি


এসজেড