ঢাকা | বঙ্গাব্দ

শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে নজিরবিহীন চাঁদাবাজি

ঢাকার মগবাজারে একটি ভবন ভাঙার জন্য সাড়ে ১৬ লাখ টাকার একটি কাজ পেয়েছিলেন এক ঠিকাদার।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫
শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে নজিরবিহীন চাঁদাবাজি ছবি : সংগৃহীত।

ঢাকার মগবাজারে একটি ভবন ভাঙার জন্য সাড়ে ১৬ লাখ টাকার একটি কাজ পেয়েছিলেন এক ঠিকাদার। কিন্তু কাজ শুরুর কিছুদিন পরই স্থানীয় অপরাধী গোষ্ঠীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে কাজ চালিয়ে যেতে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে।


এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ঢাকায় নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করা এক ঠিকাদার জানান, চাঁদাবাজি তাদের কাছে নতুন কিছু নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে যে পরিমাণ চাঁদা দাবি করা হচ্ছে, তা নজিরবিহীন। তিনি জানান, চাঁদাবাজির হুমকির কারণে ভাষানটেকের একটি প্রকল্প বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন।


মগবাজারের কাজ চালিয়ে যেতে শেষ পর্যন্ত দুই গ্যাংকে এক লাখ টাকা দিতে হয়েছে।


বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, এই গ্যাংগুলোর একটি পরিচালনা করেন শীর্ষ অপরাধী জিসান আহমেদ, যিনি বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে অবস্থান করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এই তথ্য যাচাই করা যায়নি।


অন্য একটি গ্যাংয়ের নেতা, যিনি সুব্রত বাইনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত, এই ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, 'দাদা' সুব্রত চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত নন এবং তার নাম ব্যবহার করে অন্য গ্যাংগুলো অপরাধ করছে।


হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাজু বলেন, 'চাঁদাবাজিতে সুব্রতর সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ আমরা পাইনি। অভিযোগ পাওয়া গেলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।'


অনেকের মতে, দীর্ঘদিন বিদেশে থাকার পর সুব্রত সম্প্রতি বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন।


গত কয়েক মাসে ঢাকায় চাঁদাবাজির একাধিক ঘটনা ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। নির্মাণ খাত থেকে শুরু করে অন্যান্য ব্যবসায়ীদের কাছেও নিয়মিত হুমকি আসছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং ভুক্তভোগীদের দাবি, রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মুক্তি পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।


২০০১ সালে 'শীর্ষ সন্ত্রাসী' তালিকাভুক্ত ২৩ জন অপরাধীর মধ্যে সুব্রত বাইনের নাম ছিল। এই তালিকায় আরও উল্লেখযোগ্য নামগুলো হল কিলার আব্বাস, সানজিদুল হাসান ইমন, এবং পিচ্চি হেলাল।


গ্যাংগুলো ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয়। সুব্রতর গ্যাং মগবাজার, মালিবাগ এবং ইস্কাটন এলাকায়, কিলার আব্বাস মিরপুর ও কাফরুল এলাকায়, এবং পিচ্চি হেলাল মোহাম্মদপুর ও আগারগাঁও এলাকায় কার্যক্রম চালাচ্ছে।


গত সেপ্টেম্বর মাসে একটি হত্যা মামলায় পিচ্চি হেলালের নাম উঠে আসে। মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাফিজুর রহমান জানান, 'সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি চাঁদাবাজির মামলার তদন্ত চলছে।'


হেলালকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হলেও এখনো তার অবস্থান জানা যায়নি।


অপরদিকে, ইমন গ্যাং এলিফ্যান্ট রোডে দুই কম্পিউটার ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে আহত করে। আহতদের মধ্যে একজন হলেন ইসিএস সভাপতি ওয়াহেদুল হাসান দিপু। এ ঘটনায় ইমনসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।


এক ব্যবসায়ী জানান, ইমনের গ্যাং তার কাছে চাঁদার দাবি করে এবং হুমকি দেয়। তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার ওপর হামলা চালানো হয়।


একইভাবে, আব্বাস গ্যাং ভাষানটেক এলাকায় একটি সরকারি স্কুলের ভবন ভাঙার কাজ বন্ধ করে চাঁদা দাবি করে। স্থানীয় কর্মীরা জানান, সন্ত্রাসীদের হুমকির কারণে কাজ শুরু করা যায়নি।


শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এস. এন. নজরুল ইসলাম বলেন, 'অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সক্রিয় এবং নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। অভিযুক্ত যেই হোক, তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'


thebgbd.com/NA