ভারতের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ’কুম্ভমেলা’ শুরু হয়েছে আজ সোমবার। আয়োজকরা আশা করছেন বৃহত্তম এই হিন্দু ধর্মীয় উৎসবে বিশ্বের প্রায় ৪০ কোটি পূণ্যার্থী অংশ নেবে। ভারতের উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজ থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
কুম্ভ মেলার উদ্বোধনের পরপরই হিন্দু তীর্থযাত্রীরা ভারতের উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজের ত্রিবেণি সঙ্গমে পবিত্র জলে পূণ্যস্নান শুরু করেছে। এরইমধ্যে এই মিলনস্থলে হাজির হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। আসছেন নাগা সন্ন্যাসীসহ দেশ-বিদেশের সাধুসন্তরাও। হাজার বছরের প্রাচীন এই কুম্ভমেলা গঙ্গা, যমুনা এবং সরস্বতী নদীর মোহনায় অনুষ্ঠিত হয়। হিন্দু ধর্মালম্বীরা মনে করেন গঙ্গা, যমুনা এবং সরস্বতীর সঙ্গমস্থানে গোসল করে মানুষ পাপ থেকে মুক্ত হয়। তীর্থযাত্রীরা সূর্যোদয়ের আগেই ঠান্ডা পানিতে গোসল শুরু করেন।
৪৫ বছর বয়সী সুরমিলা দেবী বলেন, অত্যন্ত আনন্দ অনুভব করছি, ‘আমার কাছে এটি অমৃত স্নানের মতো।’ উত্তর ভারতের প্রয়াগরাজ শহরে নদীর তীরে কুম্ভ মেলায় যোগদানের জন্য তাঁবুতে অবস্থান করা ব্যবসায়ী রীনা রাই বলেন, ‘একজন হিন্দু হিসেবে, এটি একটি অবিস্মরণীয় উপলক্ষ। ৩৮ বছর বয়সী এই নারী এই উৎসবে অংশ নিতে মধ্যপ্রদেশ রাজ্য থেকে প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার (৬২১ মাইল) পথ পাড়ি দিয়ে কুম্ভ মেলায় অংশ নিয়েছেন। অনেকে কয়েক সপ্তাহ ধরে হেঁটে মেলাস্থলে পৗঁছেছেন।
হিন্দু সন্ন্যাসী এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এক বিবৃতিতে ভক্তদের স্বাগত জানিয়েছেন বলেন, বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য অনুভব করতে, ধ্যান করতে এবং বিশ্বাস ও আধুনিকতার সঙ্গমে গোসল করতে বিশ্বের বৃহত্তম আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক সমাবেশ শুরু হচ্ছে। আয়োজকরা বলেছেন, কুম্ভমেলার প্রস্তুতির ব্যাপারটা একটি অস্থায়ী দেশের মতো-যার মোট জনসংখ্যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার সম্মিলিত জনসংখ্যার সমান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মেলার মুখপাত্র বিবেক চতুর্বেদী বলেছেন, প্রায় ৩৫ কোটি থেকে ৪০ কোটি ভক্ত-সাধু মেলায় আসছেন, বুঝতেই পারছেন প্রস্তুতির ব্যাপারটা কেমন। প্রায় দেড় লাখ টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে, কমিউনিটির একেকটি রান্নাঘর থেকে একবারে পঞ্চাশ হাজার মানুষ খেতে পারবে। মূল অনুষ্ঠান স্থলে ৬৮ হাজার এলইডি লাইট সেট করা হয়েছে যার এর উজ্জ্বল আলো মহাকাশ থেকে দেখা যাচ্ছে। ২০১৯ সালে শেষবার অনুষ্ঠিত ‘আধা’ কুম্ভমেলায় ২৪ কোটি পূন্যার্থী অংশ নেয়।
রোববার সন্ধ্যায় হিন্দু সন্ন্যাসীরা তাদের নিজ নিজ সম্প্রদায়ের বিশাল পতাকা বহন করে নদীর দিকে যাত্রা শুরু করেন। আয়োজক কর্তৃপক্ষ এটিকে ‘মহা কুম্ভমেলা’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। ভারতীয় পুলিশ জানিয়েছে, এই অনুষ্ঠানের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দিনরাত নিরলস ভাবে টহল পরিচালনা করা হচ্ছে। ১৩ দিনব্যাপি এই কুম্ভমেলা শেষ হবে ২৬ ফেব্রুয়ারি ।
সূত্র: এনডিটিভি
এসজেড