আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়টা ইসলামে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়টি ইবাদত, জিকির এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য অত্যন্ত বরকতময়। কুরআন এবং হাদিসে এই সময়ের আমল সম্পর্কে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়, যা একজন মুমিনের আখিরাতের পাথেয় হতে পারে।
আসরের পর মাগরিব পর্যন্ত যে আমলগুলো করা যায় তার মধ্যে অন্যতম হলো আল্লাহর জিকির। কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, "তোমরা সকাল ও সন্ধ্যায় তোমাদের রবের নাম স্মরণ করো।" (সূরা আহযাব: ৪১-৪২)। এই সময়ে বিভিন্ন জিকির যেমন, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ইত্যাদি বারবার বলা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। বিশেষত, আস্তাগফিরুল্লাহ বা ক্ষমাপ্রার্থনার জিকির আল্লাহর কাছ থেকে গুনাহ মাফ পেতে সহায়ক।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ সময়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া ও ইস্তেগফারের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, "যে ব্যক্তি সন্ধ্যার আগে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন।" (তিরমিজি)। তাই আসরের পর মাগরিব পর্যন্ত সময়টাকে ইস্তেগফার এবং অন্তর পরিশুদ্ধ করার জন্য কাজে লাগানো উচিত।
এই সময়ে রাসূল (সা.)-এর শেখানো কিছু দোয়া পড়াও অত্যন্ত উপকারী। যেমন, আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া ফা'ফু আন্নি (হে আল্লাহ! আপনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, তাই আমাকে ক্ষমা করুন)। পাশাপাশি, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক এবং সূরা নাস তিনবার করে পড়ে নিজেকে এবং পরিবারকে আল্লাহর সুরক্ষার জন্য দোয়া করা যেতে পারে।
কুরআন তিলাওয়াত এবং তাফসির অধ্যয়নও এই সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। আল্লাহর কালামের প্রতি মনোযোগ দেওয়া এবং এর মর্মার্থ বুঝে নিজের জীবনে প্রয়োগ করার চেষ্টা করা একজন মুমিনের জন্য সওয়াবের কারণ। এছাড়া, যারা কুরআন মুখস্থ করার চেষ্টা করছেন, তারা এই সময়কে আয়াত মুখস্থ করতে ব্যবহার করতে পারেন।
মাগরিবের অপেক্ষায় থাকা এবং মসজিদে গিয়ে জামাতে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। হাদিসে এসেছে, "যে ব্যক্তি একটি নামাজের পর আরেকটি নামাজের জন্য অপেক্ষা করে, সে যেন জিহাদের রাস্তায় অবস্থান করছে।" (সহীহ মুসলিম)। তাই আসরের পর মাগরিব পর্যন্ত মসজিদে অবস্থান করা বা সময়মতো মাগরিবের নামাজ আদায়ের প্রস্তুতি নেওয়া উত্তম আমল।
সবশেষে, আসরের পর মাগরিব পর্যন্ত সময়ে কোনো প্রকার নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকা জরুরি। এ সময়টা আল্লাহর ইবাদত, আত্মশুদ্ধি এবং দোয়ায় ব্যস্ত থেকে কাটানো একজন মুমিনের জন্য আখিরাতের সফলতার চাবিকাঠি হতে পারে।
thebgbd.com/NA