শরীরের কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়াতে পারে না। চিকিৎসাশাস্ত্রের ভাষায় এই সমস্যাকে বলা হয় স্লিপ প্যারালাইসিস, বা ঘুমের মধ্যে পক্ষাঘাত। স্লিপ প্যারালাইসিস হলে একজন ব্যক্তি কিছু সময়ের জন্য কথা বলা বা নাড়াচাড়া করার শক্তি হারিয়ে ফেলেন।
এটি সাধারণত কয়েক সেকেন্ড থেকে এক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তবে ওই সময়টায় রোগী ভীষণ ঘাবড়ে যান, ভয় পেয়ে যান।
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সামান্থা আফরিনের মতে, বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিস হল গভীর ঘুম ও জাগরণের মাঝামাঝি একটি স্নায়ুজনিত সমস্যা। ঘুমের ওই পর্যায়টিকে বলা হয় র্যাপিড আই মুভমেন্ট-রেম। রেম হল ঘুমের এমন একটি পর্যায় যখন মস্তিষ্ক খুব সক্রিয় থাকে এবং এই পর্যায়ে মানুষ স্বপ্ন দেখে থাকে। কিন্তু সে সময় শরীরের আর কোনো পেশী কাজ করেনা। এ কারণে এসময় মস্তিষ্ক সচল থাকলেও শরীরকে অসাড় মনে হয়।
বোবায় ধরা কাদের হয়, কেন হয়?
স্লিপ প্যারালাইসিস হওয়ার নির্দিষ্ট কোন বয়স নেই। এই পরিস্থিতি যে কারও সঙ্গে যেকোনো বয়সে হতে পারে। তবে ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা বা এনএইএস-এর তথ্য মতে তরুণ-তরুণী এবং কিশোর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
সাধারণত ৫-২৫ বছর বয়সীদের বোবায় বেশি ধরে থাকে। বোবায় ধরার একটা প্রধান কারণ হচ্ছে অনিয়মিত ঘুম। মানুষ যখন চিন্তিত থাকে বা প্রেসারে থাকে তখনো বোবায় ধরতে পারে। দেখা গেছে যারা নিয়মিত সময়ে ঘুমায় না এবং প্রয়োজনের চেয়ে কম ঘুমায় তারাই হ্যালুসিনেশনে বেশি আক্রান্ত হয়। অনেক সময় দেখা যায় অতিরিক্ত ঘুমালেও বোবায় ধরার আশঙ্কা তৈরি হয়। হ্যালুসিনেশন বা বোবায় ধরার কোনো নির্ধারিত চিকিৎসা নেই। যদিও অনেক ডাক্তার বা সাইকিয়াটিস্ট কিছু কিছু ওষুধ প্রেস্ক্রাইব করে থাকেন। সেগুলো মূলত ঘুম ঠিকমতো হওয়ার ওষুধ।
বোবায় ধরা থেকে বাঁচার উপায়
স্লিপিং প্যারালাইসিস বা বোবায় ধরা বা হ্যালুসিনেশন থেকে বাঁচতে হলে সময়মতো এবং নিয়ম করে ঠিকমতো ঘুমাতে হবে এবং চিন্তা-ভাবনা বা প্রেসার থেকে মুক্ত থাকতে হবে। মনে রাখবেন, বিষয়টি ঘুমের ব্যাঘাতের কারণে সৃষ্ট প্রতিক্রিয়া। বাস্তবে বোবায় ধরার পেছনে কোনো অলৌকিকতা বা ভূত নেই। ঘুমের ব্যাঘাত হলে স্লিপিং প্যারালাইসিসের মাধ্যমে হ্যালুসিনেশন হতে পারে। নিয়মিত এবং পরিমিত ঘুমই এই হ্যালুসিনেশন থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একমাত্র এবং সহজ উপায়।
thebgbd.com/NIT