বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর দাবি করেছেন, আন্তঃব্যাংক মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন করতে না পারার অন্যতম কারণ ছিল এ খাতটি আইসিটি মন্ত্রণালয়ের আওতায় থাকা। তিনি আরও বলেন, ‘বিনিময়’ নামক প্ল্যাটফর্মটি মূলত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের শেল কোম্পানি ছিল।
আজ বুধবার (২৯ জানুয়ারি) রাজধানীতে প্রথম আলো আয়োজিত ‘ডিজিটাল লেনদেনের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা: পরিপ্রেক্ষিত ভ্যাট বৃদ্ধি’ শীর্ষক আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি।
আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের এমডি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খিন চৌধুরী, প্রাইম ব্যাংকের চেয়ারম্যান তানজিল এ চৌধুরী, সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিনসহ বিভিন্ন খাতের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় করের হার না বাড়িয়ে করের আওতা বিস্তৃত করার দাবি জানান। এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, আসন্ন বাজেটে কর কাঠামোয় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসতে পারে এবং ব্যবসায়ীদের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেই এ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, দেশের কর ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে অনলাইনে রূপান্তর করা জরুরি। তিনি উল্লেখ করেন, কর পরিশোধ পদ্ধতি ডিজিটাল না হলে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি রোধ করা কঠিন হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি এক অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেন, যেখানে একটি প্রতিষ্ঠানের কর ফাইল দাখিল করতে গিয়ে তাদের ম্যানেজারের কাছে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ চাওয়া হয়েছিল। ঘুষ না দেওয়ার কারণে প্রতিষ্ঠানটির কর ফাইলে পাঁচ কোটি টাকা অতিরিক্ত বসিয়ে দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে কর কর্মকর্তা বদলি হয়ে যান।
তিনি আরও বলেন, কোনো পণ্য আমদানি থেকে বিক্রয় পর্যন্ত ভ্যাট হার ১০% এর বেশি হওয়া উচিত নয়। বর্তমানে ১৫% ভ্যাট সাধারণ ভোক্তাদের জন্য অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে। গভর্নর আরও বলেন, রাজস্ব খাতে দ্রুত কোনো পরিবর্তন সম্ভব নয়, তবে প্রয়োজনীয় সংস্কার শুরু করা হবে, যা সম্পূর্ণ বাস্তবায়নে তিন থেকে চার বছর লাগতে পারে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া নীতিগুলো কার্যকর হচ্ছে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। উন্নত দেশগুলোতেও মুদ্রানীতির প্রভাব দেখাতে ১০ থেকে ১২ মাস সময় লাগে, তাই বাংলাদেশেও শিগগিরই এ নীতির সুফল পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
গভর্নর আরও বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে আমানতের প্রবৃদ্ধি অত্যন্ত কম, যা অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনক। তার মতে, ন্যূনতম ১৪ থেকে ১৬% ডিপোজিট গ্রোথ না হলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা কঠিন হবে।
thebgbd.com/NA