ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ইসলামে খাবারের আদব

কোরআন ও হাদিসে খাবার খাওয়ার নিয়ম-কানুন এবং শিষ্টাচার সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
ইসলামে খাবারের আদব ফাইল ছবি

ইসলামে খাবার গ্রহণের শিষ্টাচার বা আদব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি শুধু ব্যক্তিগত সুস্থতা নয়, বরং আধ্যাত্মিক ও সামাজিক জীবনেরও অংশ। কোরআন ও হাদিসে খাবার খাওয়ার নিয়ম-কানুন এবং শিষ্টাচার সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।  


কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, "হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা হালাল ও পবিত্র অবস্থায় খাও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কোরো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।" (সূরা আল-বাকারা: ১৬৮) এই আয়াত থেকে স্পষ্ট হয় যে, মুসলিমদের জন্য হালাল ও পবিত্র খাবার গ্রহণ করা অপরিহার্য।  


খাবার খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নত। হাদিসে এসেছে, ''তোমাদের কেউ যখন খাবার খেতে বসে, সে যেন বিসমিল্লাহ বলে। যদি খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায়, তবে সে যেন বলে—বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু।" (তিরমিজি: ১৮৫৮) এটি শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষা করে এবং খাবারে বরকত বৃদ্ধি করে।  


ডান হাতে খাওয়া ইসলামের অন্যতম শিষ্টাচার। নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, "তোমাদের কেউ যেন বাম হাতে না খায় বা পান করে। কেননা শয়তান বাম হাতে খায় ও পান করে।" (মুসলিম: ২০২০) এ থেকেই বোঝা যায়, মুসলমানদের জন্য ডান হাতে খাওয়া সুন্নত এবং এটি শয়তানের স্বভাবের বিরোধী।  


খাবার গ্রহণের সময় তৃপ্তি প্রকাশ করা ও অপচয় না করাও ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, *ম"তোমরা খাও এবং পান করো, তবে অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।" (সূরা আল-আরাফ: ৩১) নবীজি (সা.) নিজেও কখনো খাবার নষ্ট করতেন না এবং উম্মতকে তা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।  


অল্প পরিমাণে খাওয়া এবং অতিরিক্ত না খাওয়ার শিক্ষা হাদিসে স্পষ্টভাবে দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "আদম সন্তানের জন্য কয়েক লোকমা খাদ্যই যথেষ্ট, যা তার পিঠ সোজা রাখার জন্য দরকার। তবে যদি বেশি খেতেই হয়, তাহলে এক-তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানির জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখবে।" (তিরমিজি: ২৩৮০)  


খাবারের শেষে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা সুন্নত। নবী (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি খাবার খেয়ে এই দোয়া পড়ে—আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আতআমানি হা-জা, ওয়া রাযাকানিহি মিন গাইরি হাউলিম মিন্নি ওলা কুওয়াহ—তার পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।" (তিরমিজি: ৩৪৫৮) অর্থাৎ, খাবারের পর শুকরিয়া আদায় করলে আল্লাহর রহমত লাভ হয়।  


খাবার গ্রহণের শিষ্টাচারের মধ্যে অন্যদের আগে খাওয়ানোও গুরুত্বপূর্ণ। রাসুল (সা.) বলেছেন, "সর্বোত্তম মানুষ সে, যে অন্যকে খাওয়ায় এবং সালামের প্রচলন করে।" (বুখারি: ৬১২৭) ইসলামে অতিথি আপ্যায়ন ও দানশীলতা অত্যন্ত প্রশংসনীয় গুণ।  


খাবারের সময় একত্রে বসে খাওয়া বরকতের কারণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "তোমরা একত্রে খাও, আলাদা আলাদা খেও না। কারণ এতে বরকত রয়েছে।" (ইবনে মাজাহ: ৩২৮৬) একসঙ্গে খেলে পারস্পরিক সম্পর্ক দৃঢ় হয় এবং খাবারে বরকত হয়।  


খাবার খাওয়ার পরে হাত ধোয়া এবং দাঁত পরিষ্কার করাও ইসলামের অন্যতম শিক্ষা। রাসুল (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি খাবার খেয়ে তার হাত ধোবে না, সে তার সঙ্গে শয়তানকে শোয়ার সুযোগ করে দেবে।" (আবু দাউদ: ৩৮৫৮)  


এসব শিষ্টাচার মেনে চললে খাবার কেবল দেহের প্রয়োজনীয় উপাদান হয়ে থাকে না, বরং তা আত্মার প্রশান্তি, সুস্থতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যমেও পরিণত হয়।


thebgbd.com/NIT