ঢাকা | বঙ্গাব্দ

গাজা ‘সাফ’ করার প্রস্তুতি ইসরায়েলের

ট্রাম্পকে ‘সর্বশ্রেষ্ঠ’ বন্ধু বলে উল্লেখ করে, ফিলিস্তিনিদের ঘাড়ধাক্কা দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
  • অনলাইন ডেস্ক | ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
গাজা ‘সাফ’ করার প্রস্তুতি ইসরায়েলের বিধ্বস্ত গাজা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়ে দিয়েছেন, তারা গাজা ভূখণ্ডের ‘দখল’ নেবেন। গাজাকে নতুন করে তৈরি করবেন। তবে সেখানে ফিলিস্তিনিদের জায়গা হবে না। তাদের চলে যেতে পড়শি কোনও দেশে। ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর থেকেই তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে ইসরায়েল। তারা বেজায় খুশি। ট্রাম্পকে ‘সর্বশ্রেষ্ঠ’ বন্ধু বলে উল্লেখ করে, ফিলিস্তিনিদের কার্যত নিজেদের ঘর থেকে ঘাড়ধাক্কা দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তাদের সেনাবাহিনীর কাছে সরকারি নির্দেশ চলে এসেছে— ‘গাজা ছেড়ে স্বেচ্ছায় বেরিয়ে যেতে সাহায্য করতে হবে ফিলিস্তিনিদের’।

 

ট্রাম্পের পরিকল্পনা শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একাধিক রাষ্ট্রনেতা। বিশ্বের প্রায় সব দেশই কার্যত বিস্মিত এবং ক্ষুব্ধ। জাতিসংঘ জানিয়েছে, প্যালেস্টাইনিদের এ ভাবে গাজা থেকে উচ্ছেদ করা হলে, সেটা ‘কোন জাতিকে নিশ্চিহ্ন করা’ হচ্ছে বলে দেখা হবে। ট্রাম্পের যদিও দাবি, তার পরিকল্পনা ‘সকলের পছন্দ’ হয়েছে। ট্রাম্পের প্রশাসন অবশ্য পরে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে কিছুটা পিছিয়ে এসেছে। বিদেশ সচিব মার্কো রুবিও বলেছেন, গাজার বাসিন্দাদের অন্যত্র সরানোর বিষয়টি সাময়িক ব্যাপার। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গাজায় মার্কিন সেনা পাঠানোর কোনও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি।


ইসরায়েল অবশ্য যথারীতি সব নিন্দামন্দ উপেক্ষা করে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্যকে ঢাল করে উচ্ছেদ-প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সাংবাদিকদের কাছে জানিয়েছেন, বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ফিলিস্তিনিদের শান্তিপূর্ণ ভাবে ‘স্বেচ্ছায়’ গাজা ছাড়ার জন্য উপযোগী একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। কিন্তু কোথায় যাবেন ফিলিস্তিনিরা? কাৎজের কথায়, ‘যেখানে ইচ্ছা, সেখানেই যেতে পারেন, যে দেশ নেবে।’ কাৎজ জানিয়েছেন, শুধু স্থলপথে সীমান্ত-পার নয়, দরকারে সমুদ্রপথে বা আকাশপথেও তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হবে। এ বিষয়ে ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনিদের ‘সাহায্য’ করবে।


একটি মার্কিন টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘ট্রাম্প হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধ। এই প্রথম কেউ কাজের কথা বললেন। আমার মনে হয় এটা সত্যিই করা উচিত। আমার বিশ্বাস, এটা সকলের ভবিষ্যৎ বদলে দেবে।’ তিনি এ-ও বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের চিরকালের জন্য গাজা ছেড়ে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে না। তারা যেতে পারেন, ফিরে আসতে পারেন, অন্যত্র থাকা শুরু করলেও ফিরে আসতে পারেন, কিন্তু গাজা পুনর্নির্মাণ করতে হবে। নেতানিয়াহুর সুরেই কাৎজ বলেছেন, ‘ট্রাম্পের পরিকল্পনা মতো চললে গাজাবাসীদেরই ভাল হবে। তারা স্বেচ্ছায় চলে গেলে তাদের আশ্রয়দাতা দেশে চলে যেতে সাহায্য করা হবে, গাজা পুনর্নির্মাণ করা যাবে, ভয়-মুক্ত গাজা তৈরি হবে।’’


কার ভয়? কোন ভয়ের কথা বলছেন কাৎজ? এর উত্তর নেই। যুদ্ধবিরতির মধ্যেই বিচ্ছিন্ন মৃত্যুর খবর মিলছে গাজা থেকে। যেমন, নুসেরাত শিবিরে আজ এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনা। রোগে ভুগে মৃত্যুও বাড়ছে। দিনের পর দিন ত্রিপল খাটানো অস্থায়ী আস্তানায় না আছে পানীয় জল, না নিকাশি ব্যবস্থা। ভাইরাস, ব্যাকটিরিয়া ছড়াচ্ছে। ইতিমধ্যেই না খেতে পেয়ে, রোগে ভুগে কত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তার কোনও হিসেব নেই। অসুখ করলে ওষুধ নেই, ডাক্তার নেই। হাসপাতালগুলি ধ্বংসস্তূপ। এর মধ্যে অভিযোগ, ত্রাণের ট্রাক গাজায় ঢুকছে ঠিকই, কিন্তু অতি প্রয়োজনীয় বহু জিনিস ঢুকতে দিচ্ছে না ইজরায়েল। এ-ও কি যুদ্ধ-কৌশল? চুপ কাৎজ। ট্রাম্প বলছেন, গাজা আসলে ফিলিস্তিনিদের জন্য ‘শুভ’ নয়। ইসরায়েল সেটাই করে দেখাচ্ছে।


সূত্র: আল জাজিরা


এসজেড