ঢাকা | বঙ্গাব্দ

আপ বিপর্যয়ে তোপ আন্নার

আপ প্রধানকে নিয়ে আক্ষেপের সুর ‘গুরু’ আন্না হাজারের কণ্ঠে। আন্নার দাবি, বার বার পরামর্শেও কর্ণপাত করেননি কেজরি।
  • অনলাইন ডেস্ক | ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
আপ বিপর্যয়ে তোপ আন্নার আন্না হাজারে-কেজরিওয়াল

দিল্লির বিধানসভা ভোটে হেরে গেছেন আম আদমি পার্টি (আপ)-র প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তাকে নিয়ে আক্ষেপের সুর সমাজকর্মী আন্না হাজারের গলায়। আন্না জানান, নির্বাচনে সাফল্য পেতে কী কী করণীয়, সে বিষয়ে তিনি অতীতে বার বার বুঝিয়েছেন কেজরীকে। কিন্তু তার কথায় গুরুত্ব দেননি আপ প্রধান। উল্টে ধনদৌলতের মধ্যেই আচ্ছন্ন থেকেছেন তিনি।


একদা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের রাজনৈতিক গুরু ছিলেন আন্না হাজারে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবই বোধহয় বদলে যায়। কয়েক বছর ধরেই প্রকাশ্যে এসেছে আন্নার সঙ্গে কেজরির ক্রমবর্ধমান দূরত্বের বিষয়টি। এবার প্রাক্তন শিষ্যের ক্ষমতা হারানোর মুহূর্তে গর্জে উঠলেন প্রবীণ জননেতা। দাবি করলেন, অর্থশক্তির নেশায় বুঁদ কেজরি মন দিয়েছিলেন মদের দিকে। শোনেননি সতর্কবাণী। আর সেই কারণেই এবার পরাজয়ের মুখ দেখতে হচ্ছে আপকে। এরইমধ্যে জানা গেছে নিজের কেন্দ্র নয়াদিল্লিতে ৩ হাজার ভোটে হারতে হয়েছে কেজরিকে।


এই পরিস্থিতিতে কী বলছেন আন্না? ২০১১ সালে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশের অন্যতম মুখ হয়ে ওঠা আন্নাকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘বরাবরই বলে এসেছি প্রার্থীর স্বভাব, ভাবনাচিন্তা হতে হয় বিশুদ্ধ। জীবনে কাউকে দোষারোপ না করে ত্যাগ করাই দস্তুর হওয়া উচিত। এই গুণগুলিই ভোটারদের কাছে ওকে বিশ্বস্ত করে তোলে। ওকে বলেছি, কিন্তু কথা শোনেনি। এবং মন দিল মদে… কেন এই ইস্যুটা উঠে এল? ও অর্থক্ষমতায় বুঁদ হয়ে পড়েছে।’


দিল্লির নির্বাচন প্রসঙ্গে আন্না বলেন, ‘আগে থেকেই বলে আসছি, নির্বাচনের সময়ে প্রার্থীর আচরণ এবং ভাবনাচিন্তায় শুদ্ধতা থাকা প্রয়োজন। নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য কোনও প্রার্থীর জীবন নিষ্কলঙ্ক হওয়া প্রয়োজন। তাঁর জীবনে ত্যাগ থাকা উচিত। কারও মধ্যে এই গুণগুলি থাকলে ভোটারদের মনে বিশ্বাস জন্মায়। এ সব কথা বার বার বলেছি। কিন্তু তার মাথায় এ সব প্রবেশ করেনি। তিনি বেশি গুরুত্ব দেন মদের উপর। কেন মদের দোকানের প্রসঙ্গ উঠল? কারণ, তিনি ধনদৌলতের মধ্যে বয়ে গেছেন।’


দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ প্রধান কেজরির সঙ্গে আন্নার এক সময়ের ‘বন্ধুত্ব’ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। ২০১১ সালে তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে আন্নার আন্দোলনের মঞ্চে দেখা যায় কেজরিকে। সেই সময়ে কেউ কেউ কেজরিকে ব্যাখ্যা করতেন আন্নার ‘ভাবশিষ্য’ হিসাবে। তবে এখন সেই ‘গুরু-শিষ্য’ সম্পর্কে ‘চিড়’ ধরেছে, সে খবরও নতুন নয়। আন্নার মঞ্চ থেকেই কেজরিওয়ালের পরিচিতি বলে অনেকে মনে করেন। ২০১২ সালে কেজরি রাজনৈতিক দল আপ গঠন করেন। যদিও রাজনৈতিক দল তৈরি নিয়ে আন্নার ঘোর ‘আপত্তি’ ছিল।


প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে আবগারি নীতি নিয়ে বিরোধীরা সরব হতেই আন্না চিঠি লিখেন, ‘তুমি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে এই প্রথম তোমাকে লিখছি। কেননা তোমার সরকারের আবগারি নীতি নিয়ে যা খবর পাচ্ছি তা আমাকে ব্যথিত করেছে। মদের মতো টাকাও নেশাচ্ছন্ন করে তোলে। ক্ষমতা তোমাকে মাতাল করেছে।’


দিল্লি বিধানসভার ভোটগণনা এখনও চলছে। শনিবারের সকালে গণনা শুরু হতেই বোঝা যায়, বিজেপি আপকে বেগ দেবে। যত সময় এগিয়েছে ততই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে গেরুয়া শিবিরই দিল্লির তখত দখল করতে চলেছে। ৭০ আসনের মধ্যে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ৩৬টি আসন। এখন পর্যন্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতার অঙ্ক থেকে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে আপ। আগের দুবার ২০১৫ সালে যেখানে আপ পেয়েছে ৬৭টি আসন, সেখানে ২০২০ সালে তাদের সংগ্রহে ছিল ৬২। কিন্তু এবার তারা বিশ পার হবে কিনা সেটাই পরিষ্কার নয়।


হেরে গিয়েছেন কেজরিওয়াল এবং মণীশ সিসোদিয়ার মতো প্রথম সারির আপ নেতারা। দিল্লিতে এক দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা কেজরির দলের ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত কতগুলি আসন জুটবে, সে দিকে নজর রয়েছে সকলের। এই অবস্থায় একদা ‘ভাবশিষ্য’ বলে পরিচিত কেজরী প্রসঙ্গে মুখ খুললেন আন্না। আর সেই পরিস্থিতিতে এবার প্রাক্তন শিষ্যকে ‘ধমক’ দিলেন আন্না।


সূত্র: এনডিটিভি


এসজেড