ঢাকা | বঙ্গাব্দ

কেন ফিরে আসে স্তন ক্যান্সার?

ভারতের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্স’-এর দুই বছরের লাগাতার গবেষণায় রহস্যভেদ হয়েছে বলে দাবি।
  • অনলাইন ডেস্ক | ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
কেন ফিরে আসে স্তন ক্যান্সার? স্তন ক্যান্সারের সবচেয়ে পরিচিত ধরন ইআর/পিআর পজিটিভ এবং এইচইআর২ নেগেটিভ।

কেউ কেউ ওষুধ পড়তেই একেবারে সুস্থ হয়ে যান, যে মারণ রোগ শরীরে বাসা বাঁধে, তা আর ফিরে আসে না। কারও ক্ষেত্রে কয়েক বছরের মধ্যেই নতুন করে দেখা দেয় উপসর্গ। ফিরে আসে ক্যান্সার। স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। অনেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যান। কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ঘটে। এর কারণ জানতে গবেষণা শুরু করেন ভারতের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্স’ (এনআইবিএমজি)-এর বিজ্ঞানীরা। দুই বছরের গবেষণায় রহস্যভেদ হয়েছে বলে দাবি করেছেন তারা। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ‘কমিউনিকেশন বায়োলজি’ জার্নালে।


এই গবেষণায় যুগ্ম ভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন এনআইবিএমজি-র অধ্যাপক নিধান বিশ্বাস এবং টাটা মেমোরিয়াল সেন্টারের পরিচালক সুদীপ গুপ্ত। এ ছাড়াও ছিলেন ‘ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট’ (আইএসআই)-এর বিজ্ঞানী পার্থপ্রতিম মজুমদার, এনআইবিএমজি-র অধ্যাপক বিজ্ঞানী অরিন্দম মৈত্র।


বিজ্ঞানীরা জানান, স্তন ক্যান্সারের সবচেয়ে পরিচিত ধরন— ইআর/পিআর (ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন) পজিটিভ এবং এইচইআর২ নেগেটিভ। এই ক্যান্সারে অ্যান্টি-ইস্ট্রোজেন বা অ্যারোমাটিজ ইনহিবিটরের মতো হরমোন থেরাপির সাহায্যে চিকিৎসাও সম্ভব। কিন্তু বহু রোগী ক্যান্সার-মুক্ত হলেও কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা কাজ দেয় না। ঘনঘন ক্যান্সার ফিরে আসে। এই ড্রাগ রেজিসস্ট্যান্স বা ওষুধে কাজ না দেওয়ার জিনগত কারণ রয়েছে কি না, তা স্পষ্ট ছিল না এত দিন। রহস্যের সমাধান করতে তারা প্রথমেই স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের থেকে নমুনা সংগ্রহ করে জিনোমিক সিকোয়েন্সিং করেন।


গবেষকদল জানান, তারা ইআর/পিআর পজিটিভ এবং এইচইআর নেগেটিভ রোগীদের বেছে নেন গবেষণার জন্য, যেহেতু এই ধরনের স্তন ক্যান্সারই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। দুই ধরনের রোগী থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। প্রথম, যারা হরমোন থেরাপিতে সুস্থ হয়েছেন (পাঁচ/ছয় বছর হয়েছে ক্যান্সার ফিরেনি, উপসর্গও নেই)। দ্বিতীয়, যাদের অল্প সময়ের মধ্যে ক্যান্সার ফিরে এসেছে।


যাদের ক্যান্সার ফিরেছে, তাদের তিনটি জিনে ‘রেজিসট্যান্স মিউটেশন সিগনেচার’ দেখা গিয়েছে। টিপি৫৩, পিআইকে৩সিএ, ইএসআর১— এই তিনটি জিনে মিউটেশন ঘটেছে এই রোগীদের। তাদের ‘জিনোম ইনস্টেবিলিটি’ও রয়েছে। অর্থাৎ তাদের টিউমার কোষে ডিএনএ খন্ডবিখণ্ড হয়ে ক্রোমোজোমের পুনর্বিন্যাস ঘটেছে। ডিএনএ মেরামতির কাজ শরীরে হচ্ছে না। তৃতীয় ‘সিগনেচার’ টেলোমিয়ারের দৈর্ঘ্য কমে যাওয়া।


গবেষণায় অনেকটাই স্পষ্ট, এই সাব-টাইপের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত কিছু রোগী চিকিৎসায় কেন সুস্থ হচ্ছেন না। টিউমার অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়ার পরে যদি জেনেটিক পরীক্ষা করে দেখা যায় নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলি রয়েছে, তাহলে রোগীকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। সামান্য উপসর্গ দেখা গেলেই তা চিহ্নিত করে দ্রুত পদক্ষেপ করা যাবে, প্রয়োজনে আবারও অস্ত্রোপচার করা যাবে।


ইআর/পিআর পজিটিভ এবং এইচইআর২ নেগেটিভ— এই সাবটাইপের ক্যান্সার হলে রোগীর সেরে ওঠার সম্ভাবনা খুবই বেশি। কিন্তু বেশির ভাগ রোগী সুস্থ হয়ে গেলেও কিছু ব্যতিক্রম লক্ষণীয়। যারা চিকিৎসায় সুস্থ হচ্ছেন না, তাদের ক্ষেত্রে যদি ওই জিনগুলি দায়ী হয়, জিনোম ইনস্টেবিলিটি কাজ করে, সেই তথ্য জানতে পারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে চিকিৎসায় উপকার হবে।


সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া


এসজেড