জন্মগত হৃদরোগ (Congenital Heart Disease - CHD) হলো হৃদপিণ্ডের গঠনগত ত্রুটি যা ভ্রূণ অবস্থায় বিকাশের সময় তৈরি হয়। এই রোগের কারণ এখনও পুরোপুরি বোঝা না গেলেও বেশ কিছু সম্ভাব্য কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে।
জন্মগত হৃদরোগের সম্ভাব্য কারণসমূহ
১. জেনেটিক ও বংশগত কারণ
পরিবারে জন্মগত হৃদরোগের ইতিহাস থাকলে শিশুর আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
কিছু জিনগত ত্রুটি বা ক্রোমোজোম অস্বাভাবিকতা জন্মগত হৃদরোগের কারণ হতে পারে (যেমন: ডাউন সিন্ড্রোম, টার্নার সিন্ড্রোম ইত্যাদি)।
একক বা একাধিক জিনগত মিউটেশনও হৃদরোগ সৃষ্টি করতে পারে।
২. গর্ভকালীন সংক্রমণ ও মাতৃস্বাস্থ্য
রুবেলা (জার্মান মিজেলস) বা অন্যান্য ভাইরাল সংক্রমণ গর্ভাবস্থায় হলে শিশুর হৃদপিণ্ডের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে শিশুর জন্মগত হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৩. গর্ভকালীন ওষুধ ও রাসায়নিক পদার্থের প্রভাব
গর্ভাবস্থায় নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ গ্রহণ (যেমন: অ্যাকিউটেন, লিথিয়াম, কিছু এন্টি-এপিলেপ্টিক ড্রাগ) হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
অ্যালকোহল বা মাদকদ্রব্য সেবন গর্ভস্থ শিশুর হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক গঠন ব্যাহত করতে পারে।
৪. পুষ্টিগত কারণ
ফোলিক অ্যাসিড বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনের ঘাটতি থাকলে শিশুর হৃদপিণ্ডের সঠিক বিকাশ নাও হতে পারে।
৫. পরিবেশগত কারণ
বায়ুদূষণ, তেজস্ক্রিয় বিকিরণ বা ভারী ধাতুর সংস্পর্শে আসা শিশুর হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৬. অজানা কারণ
অনেক ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট কারণ শনাক্ত করা যায় না, তবে ধারণা করা হয় যে জিনগত ও পরিবেশগত ফ্যাক্টর একত্রে কাজ করে এই রোগ সৃষ্টি করে।
প্রতিরোধের উপায়
গর্ভাবস্থায় নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো।
সংক্রমণ এড়াতে রুবেলার মতো ভ্যাকসিন গ্রহণ করা।
গর্ভাবস্থায় ওষুধ গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
ডায়াবেটিস ও অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা।
পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ ও দূষণ এড়ানো।
জন্মগত হৃদরোগের কারণগুলো মূলত জেনেটিক ও পরিবেশগত। সময়মতো সচেতনতা ও গর্ভকালীন যত্ন নেওয়া হলে অনেক ক্ষেত্রে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।