ঢাকা | বঙ্গাব্দ

রমজানের শেষদিকে যেসব আমল করতেন রাসুল (সা.)

রমজানের শেষ দশ দিনে রাসুল (সা.) কিছু বিশেষ আমল করেছেন, যা অনুসরণ করা মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের ইবাদতের মান বাড়ায়।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৮ মার্চ, ২০২৫
রমজানের শেষদিকে যেসব আমল করতেন রাসুল (সা.) ছবি : সংগৃহীত

রমজানের শেষ দশ দিনে রাসুল (সা.) কিছু বিশেষ আমল করেছেন, যা অনুসরণ করা মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের ইবাদতের মান বাড়ায়। রাসুল (সা.) এই দিনগুলোতে অতিরিক্ত ইবাদত ও দোয়া করতে তৎপর থাকতেন। এখানে রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে যেসব বিশেষ আমল করেছেন, তা নিচে উল্লেখ করা হলো:


১. অধিক ইবাদত ও রাতের নামাজ (তাহাজ্জুদ)


রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশ দিনগুলোতে রাতের ইবাদত (তাহাজ্জুদ) অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে আদায় করতেন।


হাদিস: আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: "রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে এত বেশি ইবাদত করতেন, যে তার রাত্রির নিস্তার (বিশ্রাম) খুবই কম হতো।" (মুসলিম)


রাসুল (সা.) রাতের সময়গুলোতেও বিশেষভাবে অধিক নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।


২. ইতিকাফ করা


রমজানের শেষ দশ দিনে রাসুল (সা.) মসজিদে ইতিকাফ করতেন। ইতিকাফ হলো মসজিদে বসে আল্লাহর ইবাদত করা এবং অন্যান্য পার্থিব কাজ থেকে বিরত থাকা।


হাদিস: আয়েশা (রা.) বলেন, "রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন এবং আমরা সবাইকে ইতিকাফ করার নির্দেশ দিতেন।" (বুখারি)


ইতিকাফের মাধ্যমে মুসলিমরা আল্লাহর কাছে মনোনিবেশ করে এবং সারা রাতের ইবাদত করার সুযোগ পায়।


৩. লাইলাতুল কদর সন্ধান করা


রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর সন্ধান করতেন, যা হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।


হাদিস: "তোমরা রমজানের শেষ দশকের ব odd রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর খোঁজো।" (বুখারি)


রাসুল (সা.) লাইলাতুল কদরের জন্য গভীর রাতগুলোতে ইবাদত এবং দোয়া করতেন, যাতে এই রাতের বরকত ও সওয়াব লাভ করা যায়।


৪. বেশি বেশি দোয়া ও ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা)


রমজানের শেষ সময়ে রাসুল (সা.) অতিরিক্ত ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করতেন।


হাদিস: "রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইস্তেগফার বেশি বেশি করতেন এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।" (বুখারি)


রাসুল (সা.) তার উম্মতের জন্য দোয়া এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতেন, যেন তারা রমজান মাসের বরকত থেকে বাদ না পড়ে।


৫. সাদাকাহ ও দান-সদকাহ বৃদ্ধি করা


রমজানের শেষ দিনে রাসুল (সা.) দান-সদকাহ বেশি দিতেন।


হাদিস: "রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে দান-সদকাহ করতেন, তবে রমজানের শেষ দশকগুলোতে তিনি আরও বেশি দান করতেন।" (বুখারি)


রাসুল (সা.) এই দিনগুলোতে গরিবদের সাহায্য করতে এবং ইসলামের প্রচারের জন্য অধিক সাদাকাহ দিতেন।


৬. তারিকাত ও একাগ্রতার সাথে আল্লাহর কাছে দোয়া করা


রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকের রাতে একাগ্রতার সাথে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন।


তিনি "اللهم إنك عفو تحب العفو فاعف عني" (অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, আমাকে ক্ষমা করুন) বারবার পড়তেন।


৭. আত্মসংযম ও পরিশ্রম


রমজানের শেষ দশকে রাসুল (সা.) আত্মসংযম এবং ধৈর্যের পরিচয় দিতেন।


তিনি মুসাফাহা (একে অপরকে হাত মেলানো) করার মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব তৈরি করতেন এবং এ সময় ভালো কাজের প্রতি উদ্দীপিত করতেন।



রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে কিছু বিশেষ আমল করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতেন এবং তার উম্মতকে এ আমলগুলো করার জন্য উৎসাহিত করতেন। রমজানের শেষ দশকের আমলগুলো আমাদের জন্য এক উত্তম দিকনির্দেশনা, যাতে আমরা বেশি বেশি ইবাদত, দোয়া, তাওবা, দান ও আল্লাহর রহমত লাভ করতে পারি।


thebgbd.com/NA