দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির পরাজয়ের ৮০ বছর পূর্তিতে মস্কোর ঐতিহ্যবাহী বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সামরিক কুচকাওয়াজ ঘিরে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে আজ শুক্রবার বিশ্বনেতাদের আতিথ্য দিচ্ছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার জড়িত থাকার মধ্যে এ কুচকাওয়াজ দেশি-বিদেশি পর্যায়ে শক্তির প্রদর্শন এবং দেশবাসীর ভেতর দেশপ্রেম উসকে দেওয়ার কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মস্কো থেকে এএফপি জানায়, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশ স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিৎসোসহ অন্তত ২০ জন বিদেশি নেতা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকছেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর এটিই রাশিয়ার চতুর্থ বিজয় দিবস উদ্যাপন।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে সোভিয়েত বিজয়ের এই ৮০ বছর পূর্তিকে কেন্দ্র করে এ বছর হবে ‘এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় আয়োজন’। পুতিন ইউক্রেনের সঙ্গে তিনদিনব্যাপী ‘মানবিক যুদ্ধবিরতির’ ঘোষণাও দিয়েছেন এ উপলক্ষে। লাল চত্বরে সামরিক সরঞ্জাম ও সেনাদের কুচকাওয়াজ শেষে বক্তৃতা দেবেন পুতিন। ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর থেকে তিনি প্রায়শই রাশিয়ার বর্তমান সেনাবাহিনীকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসিদের বিরুদ্ধে লড়াই করা সোভিয়েত বাহিনীর সঙ্গে তুলনা করে থাকেন।
‘প্রিয় বন্ধু’ শি জিনপিং, কড়া নিরাপত্তা
অনুষ্ঠান ঘিরে মস্কোতে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিষিদ্ধ করা হয়েছে ভ্যাপ পেন, বৈদ্যুতিক স্কুটার, এমনকি প্রাণীও। মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগও সীমিত করে রাখা হয়েছে ইউক্রেনীয় হামলার শঙ্কায়। প্যারেডের আগের দিন ক্রেমলিনে বৈঠক করেন শি ও পুতিন। দীর্ঘ তিন ঘণ্টার আলোচনার পর পুতিন শিকে ‘প্রিয় বন্ধু’ বলে অভিহিত করেন এবং দুই নেতা পশ্চিমা জোটবিরোধী বক্তব্য দেন।
প্যারেডে অংশ নিচ্ছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা ডা সিলভাও। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যদের মধ্যে একমাত্র স্লোভাক প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি পশ্চিমা বিশ্বে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দার ভুচিচও অনুষ্ঠানে উপস্থিত রয়েছেন; রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে দেশটির।
‘মহান দেশপ্রেমিক যুদ্ধ’ ও জাতীয় স্মৃতি
রাশিয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে ‘মহান দেশপ্রেমিক যুদ্ধ’ নামে স্মরণ করা হয়, যা শুরু হয় ১৯৪১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর জার্মানির আক্রমণের মধ্য দিয়ে এবং শেষ হয় ১৯৪৫-এ জার্মানির আত্মসমর্পণের মাধ্যমে। যদিও ১৯৩৯ থেকে ১৯৪১ পর্যন্ত সোভিয়েত-নাৎসি অনাক্রমণ চুক্তির বিষয়টি সরকারি ইতিহাসে চেপে যাওয়া হয়।
এই যুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের দুই কোটির বেশি মানুষ নিহত হয়—এ জাতীয় ট্র্যাজেডিকে বারবার সামনে টেনে আনেন পুতিন। ২৫ বছরের শাসনামলে তিনি ৯ মে-কে বানিয়েছেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দিবস, এবং নিজের সেনাবাহিনীকে তুলে ধরেন ‘ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে’ রক্ষাকর্তা হিসেবে।
সূত্র: এএফপি
এসজেড