ইসলাম ধর্মে যুদ্ধ একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয় এবং এটি কখনোই প্রেরণা বা আনন্দের বিষয় নয়। ইসলাম যুদ্ধের অনুমোদন দেয় শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে, যেখানে আত্মরক্ষার প্রয়োজন বা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা হয়। ইসলামে যুদ্ধের নীতি ও শর্তাবলী খুব স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা শান্তির প্রতি আনুগত্য এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রেরিত।
ইসলামে যুদ্ধের শর্তাবলী
আত্মরক্ষা ও ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ: ইসলাম ধর্মে যুদ্ধের প্রধান উদ্দেশ্য হল আত্মরক্ষা এবং অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা। যখন কোনো মুসলিমের ওপর আক্রমণ হয় বা তাদের অধিকার লঙ্ঘিত হয়, তখন আত্মরক্ষা এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করা জায়েজ। যেমনটি কুরআনে বলা হয়েছে:
“যুদ্ধ করা তোমাদের ওপর ফরজ করা হয়েছে, যদিও তোমরা তা অপছন্দ করো। সম্ভবত তোমরা এমন কিছু অপছন্দ করো যা তোমাদের জন্য ভালো, অথবা তোমরা এমন কিছু ভালোবাসো যা তোমাদের জন্য খারাপ। আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না।” (সুরা আল-বাকারা, ২:২১৬)
যুদ্ধের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ বজায় রাখা: ইসলাম যুদ্ধের মধ্যে মানবাধিকার এবং নৈতিক মূল্যবোধ বজায় রাখার উপর গুরুত্ব দেয়। মুসলিম সৈন্যদের নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো যে, তারা যেন নিরপরাধ মানুষ, নারীরা, বাচ্চারা, বুড়োরা এবং অক্ষম ব্যক্তিদের আঘাত না করে। এর পাশাপাশি গাছপালা বা আবাসিক এলাকা ধ্বংস করাও নিষিদ্ধ ছিল।
“তোমরা কোন শহর বা গ্রামকে ধ্বংস করো না, যা আল্লাহ তোমাদের দিয়েছিলেন, যদি না তা যুদ্ধের কারণে হয়।” (সুরা আল-হাশর, ৫৯:৭)
শান্তি প্রতিষ্ঠা: ইসলাম সর্বদা শান্তি প্রতিষ্ঠার পক্ষে। যুদ্ধ শেষ করার পর, শর্ত সাপেক্ষে এবং প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পক্ষে। কুরআনে এসেছে:
“তবে যদি তারা শান্তি চায়, তাহলে তুমি তাদের সঙ্গে শান্তির ব্যবস্থা করো।” (সুরা আল-আনফাল, ৮:৬১)
যুদ্ধের শর্ত: যুদ্ধের অনুমোদন কেবলমাত্র সেগুলোর জন্যই যা সত্যিকার ন্যায়ের জন্য এবং অত্যাচার ও অশান্তি প্রতিরোধের জন্য করা হয়। মুসিবত ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে, তবে অকারণ যুদ্ধ বা আগ্রাসন ইসলাম কখনও অনুমোদন করে না।
ইসলামে যুদ্ধের নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ
বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা: যুদ্ধের সময় বেসামরিক জনগণ, নারীরা এবং শিশুরা কোনোভাবেই আক্রমণের শিকার হতে পারবেন না। যুদ্ধের নির্দিষ্ট শর্তগুলো বজায় রাখতে হবে।
নিরপরাধ মানুষ ও স্থাপনা ধ্বংস করা: ইসলাম শান্তির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে সমস্ত ধরনের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। যুদ্ধে প্রকৃত শান্তির প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার রক্ষা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান কায়েম করা গুরুত্বপূর্ণ।
অতিরিক্ত সহিংসতা: সহিংসতার মাত্রা প্রয়োজনের সীমায় থাকতে হবে। নিরপরাধদের ওপর অপ্রয়োজনীয় আক্রমণ ও অত্যাচার ইসলাম অনুমোদন করে না।
ইসলামের শান্তির দিকে আহ্বান: ইসলাম সবসময় শান্তি ও সুবিচারের পক্ষে, এবং যুদ্ধকে কেবলমাত্র একটি শেষ বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করতে বলেছে। কুরআনে সুরা আল-ফারুকের ২৫:৬৪-এ বলা হয়েছে:
“তারা হলেন যারা পৃথিবীতে অহংকার করতে চায় না, এবং যারা শান্তিপূর্ণভাবে চলে।”
অতএব, ইসলাম যুদ্ধের মাধ্যমে অস্থিরতা সৃষ্টি করা বা অহংকারকে উৎসাহিত করার বিপক্ষে। এর পরিবর্তে ইসলাম শান্তির প্রতি আহ্বান জানায় এবং যেকোনো সংঘাতের সমাধান শান্তিপূর্ণভাবে করার চেষ্টা করে।
ইসলামে যুদ্ধ শুধুমাত্র একটি সুরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম হিসেবে অনুমোদিত। তবে, এর মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকার রক্ষা করার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইসলাম কখনও যুদ্ধকে উৎসাহিত করে না, বরং শান্তির পথে চলতে এবং সব সময় ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করতে আহ্বান জানায়।
thebgbd.com/NIT