ঢাকা | বঙ্গাব্দ

গৃহীত হচ্ছে মহামারি চুক্তি

এই মহামারি চুক্তির মূল লক্ষ্য হলো কোভিড-১৯ মহামারির সময় দেখা দেওয়া বিশৃঙ্খলা ও সমন্বয়হীনতা ভবিষ্যতে এড়ানো।
  • অনলাইন ডেস্ক | ২০ মে, ২০২৫
গৃহীত হচ্ছে মহামারি চুক্তি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

ভবিষ্যতের মহামারির বিরুদ্ধে বৈশ্বিক প্রস্তুতি জোরদারে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি গ্রহণ করতে যাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটির বার্ষিক সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক সভায় চুক্তিটি অনুমোদনের জন্য তোলা হবে আজ মঙ্গলবার, এর আগের দিন সোমবার ডব্লিউএইচও-র একটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে।


জেনেভা থেকে এএফপি জানায়, দীর্ঘ তিন বছর চলা আলোচনার পর গত এপ্রিল মাসে চুক্তির চূড়ান্ত পাঠ প্রস্তুত হয়। চুক্তিটি গৃহীত হলে এটি ডব্লিউএইচও-র জন্য হবে একটি বড় কূটনৈতিক অগ্রগতি, বিশেষ করে এমন এক সময়ে যখন সংস্থাটি ব্যাপক বাজেট সংকোচনের মুখে রয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী নানা স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলা করছে। এই মহামারি চুক্তির মূল লক্ষ্য হলো কোভিড-১৯ মহামারির সময় দেখা দেওয়া বিশৃঙ্খলা ও সমন্বয়হীনতা ভবিষ্যতে এড়ানো। এতে বৈশ্বিক পর্যায়ে মহামারির নজরদারি, দ্রুত প্রতিক্রিয়া এবং টিকা ও চিকিৎসা সামগ্রীতে সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিতের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।


কমিটির সভাপতির দায়িত্বে থাকা নামিবিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসপেরেন্স লুভিনদাও জানান, ১২৪টি দেশের ভোটে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে, কোনো দেশই বিপক্ষে ভোট দেয়নি। তবে ইরান, ইসরাইল, ইতালি, পোল্যান্ড ও রাশিয়াসহ ১১টি দেশ ভোটদানে বিরত ছিল।


ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়েসুস বলেন, 'এই চুক্তির মধ্য দিয়ে বিশ্বের সরকারগুলো এমন রোগজীবাণু ও ভাইরাসের হুমকির মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করার দিকে আরও এক ধাপ এগোল।' তিনি বলেন, নতুন চুক্তিটি ভবিষ্যতের মহামারি ঠেকাতে ও প্রতিক্রিয়ায় ‘আরও কার্যকর, দ্রুত ও ন্যায়সঙ্গত’ সহযোগিতা নিশ্চিত করবে।


বাজেট সংকটের ছায়ায় সম্মেলন


বার্ষিক এই সম্মেলন শুরু হয়েছে এমন এক সংকটময় প্রেক্ষাপটে, যখন যুক্তরাষ্ট্র তাদের ২০২৪ ও ২০২৫ সালের সদস্য চাঁদা পরিশোধে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং বৈদেশিক সাহায্য প্রায় পুরোপুরি স্থগিত রেখেছে। এতে করে ডব্লিউএইচও-র কার্যক্রম, কর্মীসংখ্যা ও বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য প্রকল্পগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে ডব্লিউএইচও থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়, তার ধারাবাহিকতায় দেশটি মহামারি চুক্তির আলোচনাতেও অংশ নেয়নি।


ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, ২০২৬-২০২৭ সালের বাজেট ৫.৩ বিলিয়ন ডলার থেকে কমিয়ে ৪.২ বিলিয়ন ডলার করা হয়েছে। তবু এখনও ১.৭ বিলিয়ন ডলার ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি পূরণে কর্মীদের বেতন খরচ ২৫ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনার পাশাপাশি সাশ্রয়ী শহরগুলোতে কিছু কার্যক্রম স্থানান্তরের কথাও ভাবছে সংস্থাটি।


সম্মেলনের বাকি সময়টিতে সদস্য রাষ্ট্রদের মধ্যে অন্যতম আলোচ্য বিষয় হবে—ডব্লিউএইচও-র সদস্য চাঁদা ২০ শতাংশ বাড়ানো হবে কি না। ২০২২ সালে গৃহীত এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী কয়েক বছর ধরে সদস্য চাঁদার পরিমাণ ধাপে ধাপে বাড়িয়ে সংস্থার মোট বাজেটের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধি প্রেশাস মাতোসো বলেন, ‘ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও এই চুক্তি প্রমাণ করে, বিশ্ব এখনও একসঙ্গে কাজ করার সক্ষমতা ধরে রেখেছে।’


সূত্র: এএফপি


এসজেড