ঢাকা | বঙ্গাব্দ

অস্ট্রেলিয়ায় ভয়াবহ বন্যা

আগামী ৪৮ ঘণ্টায় আরও ২০০ মিলিমিটার (৭.৮৭ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
  • অনলাইন ডেস্ক | ২২ মে, ২০২৫
অস্ট্রেলিয়ায় ভয়াবহ বন্যা অস্ট্রেলিয়ার পূর্বাঞ্চলে বন্যা।

অস্ট্রেলিয়ার পূর্বাঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে দ্রুতগতির বন্যার পানি বুধবার ঘরবাড়ি প্লাবিত করে দিয়েছে। প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আটকা পড়েছেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। নিউ সাউথ ওয়েলস অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় টানা দুই দিনে স্বাভাবিকের চেয়ে চার মাসের বেশি পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। বহু বাসিন্দা রাতভর বাড়ির ছাদে আটকা পড়ে ছিলেন। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিন আরও বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।


পুলিশের বরাত দিয়ে সিডনি থেকে এএফপি জানিয়েছে, নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় মাত্র দুদিনেই মে মাসের গড় বৃষ্টিপাতের তুলনায় চারগুণ বেশি বৃষ্টি হয়েছে, ফলে কাদায় ছেয়ে গেছে ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও সড়ক। সিডনি থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত মটো নামের একটি গ্রামে একটি বন্যা-কবলিত বাড়ি থেকে ৬৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকারী দল জানিয়েছে, অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন বাড়ির ছাদে। তাদের উদ্ধারে হেলিকপ্টার, নৌকা ও ড্রোন মোতায়েন করা হয়েছে।


নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রিমিয়ার ক্রিস মিনস একে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় আরও খারাপ পরিস্থিতির আশঙ্কা করছি।’ মিনস আরও বলেন, মধ্য উত্তর উপকূলজুড়ে ৫০ হাজারের মতো মানুষ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন, যেখানে পাহাড়ি অঞ্চল থেকে নেমে আসা নদীগুলো বন্যা সৃষ্টি করছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, অন্তত তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।


কেম্পসি শহরের মেয়র কিনি রিং বলেন, কৃষিভিত্তিক শহরটি হঠাৎ করেই নদীর পানিতে ঘিরে ফেলা হয়েছে। ‘টিনের ছাদে বৃষ্টির শব্দ সাধারণত শান্তির, কিন্তু এখন তা ভয়াবহ আর কর্ণবিদারী,’ বলেন তিনি। তিনি জানান, শুধু তার প্রশাসনিক এলাকাতেই ২০ হাজারের বেশি মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন, যাদের অনেকেই প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সরবরাহ পাচ্ছেন না।


‘টানা ও ভারী বৃষ্টি হচ্ছে এবং তা কমছে না। মাটি ইতোমধ্যে জলসিক্ত হয়ে উঠেছে এবং নদীগুলো ফুলেফেঁপে উঠেছে,’ জানান রাজ্যের জরুরি পরিস্থিতি বিষয়ক মন্ত্রী জিহাদ ডিব। সিডনি থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত টারি শহরকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সোমবার থেকে টারিতে ৪১৫ মিলিমিটার (১৬.৩৪ ইঞ্চি) বৃষ্টি হয়েছে—যা মে মাসের গড় বৃষ্টিপাতের চারগুণেরও বেশি।


প্রশাসন জানায়, টারির একটি নদীর পানি বুধবার ১৯২৯ সালের রেকর্ড ছাড়িয়ে ৬.৩ মিটার (২০.৬ ফুট) পর্যন্ত পৌঁছেছে। পানি এত দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে যে অনেক বাসিন্দা বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন, কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে উদ্ধারকর্মীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি।


টারির বাসিন্দা হোলি পিলোত্তো, যিনি বাড়ির ওপর তলার একটি কক্ষে আটকা পড়েন, অস্ট্রেলিয়ার চ্যানেল নাইনকে বলেন, ‘পাশের বারান্দায় আমাদের প্রতিবেশীরাও আটকা পড়ে আছেন। এটি খুব বিপজ্জনক একটি অবস্থা। আমরা সাহায্যের অপেক্ষায় আছি।’ মন্ত্রী জিহাদ ডিব জানান, ‘আমরা আমাদের সব রিসোর্স ব্যবহার করছি ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে পৌঁছতে।’


নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য জরুরি সেবা বিভাগের প্রধান সুপারিনটেনডেন্ট ডালাস বায়ার্নস বলেন, পরিস্থিতি ‘অত্যন্ত দ্রুত পরিবর্তনশীল ও জটিল’। তিনি জানান, গতরাতে ১৫০টির বেশি উদ্ধার অভিযান চালানো হয়েছে। ‘আমরা অনেককে ছাদ ও বাড়ির ওপরতলা থেকে উদ্ধার করছি,’ বলেন তিনি। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আবহাওয়া এতটাই প্রতিকূল যে হয়তো উদ্ধারকারী হেলিকপ্টারগুলো সারাদিনই উড়তে পারবে না।’ প্রায় ১৬ হাজার মানুষ বা ৭ হাজার ৪০০টি বাড়ি অন্তত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাইরের জগত থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।


আগামী ৪৮ ঘণ্টায় আরও ২০০ মিলিমিটার (৭.৮৭ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপপ্রবাহসহ নানা ধরনের চরম আবহাওয়া পরিস্থিতি আরও ঘন ঘন ও ভয়াবহ হয়ে উঠছে বলে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে আসছেন।


‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে’


অস্ট্রেলিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল—মরুভূমি থেকে শুরু করে উপকূলীয় বনাঞ্চল পর্যন্ত—সম্প্রতি ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশের চারপাশের সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা ছিল ইতিহাসের সর্বোচ্চ। উষ্ণ সমুদ্র থেকে বায়ুমণ্ডলে অতিরিক্ত আর্দ্রতা উঠে আসে, যা প্রবল বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা বাড়ায়।


প্রিমিয়ার মিনস বলেন, ‘আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার দক্ষতা বাড়ছে, কিন্তু এর কারণ হলো এসব দুর্যোগের তীব্রতাও বাড়ছে।’ মোট ২,৫০০ জরুরি সেবা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। ব্যবহার করা হচ্ছে উদ্ধারকারী নৌকা, হেলিকপ্টার ও শত শত ড্রোন। জরুরি ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী ক্রিস্টি ম্যাকবেইন বলেন, কিছু নদীর পানি এখনও চূড়ায় ওঠেনি। ‘আমরা এখনও সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মধ্যেই রয়েছি,’ জানান তিনি। 


সূত্র: এএফপি


এসজেড