মার্চে গাজা যুদ্ধবিরতির পথ ছেড়ে আবারও সামরিক অভিযানে ফেরার সিদ্ধান্তে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে অনেকেই বলেছিলেন “রাজনৈতিক আত্মহত্যা” করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফের মধ্যস্থতায় তৈরি সেই যুদ্ধবিরতি চুক্তির ফলেই হামাসের হাতে আটক বহু বন্দি মুক্তি পেয়েছিল। পরবর্তী ধাপে আরও বন্দি মুক্তি ও গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের পরিকল্পনা ছিল।
তবে সেই প্রক্রিয়া ভেঙে নেতানিয়াহু ঘোষণা দেন, যুদ্ধ চলবে যতক্ষণ না “হামাস সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়।” এই ঘোষণার পর দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষ করে বন্দিদের পরিবারের মধ্যে। তারা অভিযোগ তোলেন, নেতানিয়াহু নিজের রাজনৈতিক ক্ষমতা ধরে রাখতে তাদের স্বজনদের জীবনকে বিপন্ন করছেন।
তিন মাস পর, ইরানের বিরুদ্ধে ১২ দিনের সামরিক অভিযানের পর “বিজয়ী” নেতানিয়াহু এখন আবার আগাম নির্বাচন নিয়ে ভাবছেন। তবে জরিপ বলছে, যুদ্ধের পর তার জনপ্রিয়তায় তেমন ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি।
সাম্প্রতিক মারিভ পত্রিকার জরিপে দেখা গেছে, ইসরায়েলিদের ৫৯% এখনই গাজা যুদ্ধ বন্ধ করে বন্দি বিনিময়ের পক্ষে। ৪৯% মনে করেন, নেতানিয়াহু কেবল রাজনৈতিক সুবিধার জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।
ইসরায়েল ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের গবেষক অধ্যাপক টামার হারম্যান বলেন, “নেতানিয়াহু দক্ষ রাজনৈতিক অভিনেতা, তবে এখন তার সবচেয়ে বড় সংকট হলো জনগণের আস্থা।” তিনি জানান, তাদের জরিপ অনুযায়ী নেতানিয়াহুর প্রতি “পূর্ণ বা আংশিক আস্থা” প্রকাশ করেছেন ৫০%-এর কম মানুষ।
এই অবস্থায় আগাম নির্বাচন ডাকা নেতানিয়াহুর জন্য ইরান আক্রমণের চেয়েও বড় রাজনৈতিক ঝুঁকি হতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। কারণ, সামনে আছে আরও একটি বড় চ্যালেঞ্জ—তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা।
আগামী সপ্তাহেই এই মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিতে হবে নেতানিয়াহুকে, যেখানে তার বিরুদ্ধে ঘুষ ও প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। তার আইনজীবীরা যুদ্ধকালীন জরুরি অবস্থা দেখিয়ে মামলার তারিখ পিছাতে চাইলেও আদালত তা নাকচ করে দিয়েছে।
এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প এই মামলাকে “রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র” বলে দাবি করে নেতানিয়াহুকে ক্ষমা বা মামলাটি বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছেন। অথচ একই ট্রাম্প কয়েকদিন আগেই যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে নেতানিয়াহুকে প্রকাশ্যে গালি দিয়েছিলেন। ইসরায়েলের অনেকেই ট্রাম্পের এই মন্তব্যকে “অসম্মানজনক” ও “হস্তক্ষেপমূলক” বলে নিন্দা করেছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রাক্তন কর্মকর্তারা বলছেন, গাজায় যা সামরিকভাবে অর্জন করা সম্ভব ছিল, তা সম্পন্ন হয়েছে। তবুও যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়াকে অনেকেই নেতানিয়াহুর "ব্যক্তিগত এজেন্ডা" বলে মনে করছেন।
উল্লেখযোগ্য যে, গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) ইতোমধ্যেই নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। যদিও তারা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
নতুন নির্বাচন কতটা সম্ভব, তা এখনো অনিশ্চিত। কারণ গাজায় যুদ্ধ চলছে, ইসরায়েলি বন্দিরা এখনো মুক্ত হয়নি। তবে বহুবার রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে আবার ফিরে আসা নেতানিয়াহুকে নিয়ে কেউ আর পূর্বানুমান করতে চায় না।
thebgbd.com/NIT