প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে ১৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেপ্তার বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান খায়রুল বাশারের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন ভুক্তভোগীরা। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) তাঁকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে তোলা হলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আদালত প্রাঙ্গণে স্লোগান দেন এবং ডিম ছুড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শুনানি শেষে আদালত তাঁকে ১০ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন।
এর আগে সোমবার (১৫ জুলাই) রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে বাশারকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। মঙ্গলবার সকাল থেকেই তাঁর হাজিরার খবর ছড়িয়ে পড়লে আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হন দুই শতাধিক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। দুপুরে বাশারকে আদালতে আনা হলে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। কড়া পুলিশ পাহারায় বাশারকে হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে হাজির করা হয়, কিন্তু সিঁড়ি দিয়ে উঠানোর সময় বিক্ষুব্ধ জনতা তাঁর দিকে ডিম ছুড়ে মারেন, যা গিয়ে লাগে তাঁর ও আশপাশে থাকা পুলিশের ওপর।
আদালতে শুনানির সময় বাশারকে উদ্দেশ করে বিচারক বলেন, “আপনি শত শত সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীকে কীভাবে প্রতারিত করলেন?” জবাবে বাশার বলেন, “আমি পরিস্থিতির শিকার।” তবে তিনি সেই পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দেননি।
সিআইডির উপপরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খালিদ সাইফুল্লাহ আদালতকে জানান, ১৪১ শিক্ষার্থীকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে ১৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বাশার। এছাড়া আরও ৪৪৮ জন ভুক্তভোগীর তথ্য পাওয়া গেছে, এবং সংখ্যাটি আরও বাড়তে পারে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী জামাল উদ্দিন খন্দকার বলেন, “খায়রুল বাশার কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কথা বলে অন্তত এক হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। প্রতারিত শিক্ষার্থীরা অফিসে গেলে তাঁদের মারধর করা হতো। তাঁর ‘বাশার বাহিনী’ ছিল। এমনকি দেওয়া চেকগুলো বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, বাশারের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বহু মামলা রয়েছে এবং অনেক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে। আদালতে বাশারের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রিসভার সদস্যদের ছবি ও মারধরের শিকার ভুক্তভোগীদের ছবিও উপস্থাপন করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি শামছুদ্দোহা বলেন, “শিক্ষা একজন মানুষের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। কিন্তু খায়রুল বাশার শিক্ষাকে ব্যবসায় পরিণত করে শত শত শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ভেঙেছেন।”
বিচারক যখন বাশারকে প্রশ্ন করেন, তাঁর বাড়ি কোথায়, কতটি সন্তান রয়েছে—তখন তিনি জানান, তাঁর বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, তিনি দুইটি বিয়ে করেছেন এবং পাঁচটি সন্তান রয়েছে। বিচারক তখন বলেন, “আপনার বিরুদ্ধে যত মামলা রয়েছে, আপনার তো জীবন জেলেই কেটে যাবে।”
উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক খায়রুল বাশারকে ১০ দিনের রিমান্ডে সিআইডির হেফাজতে পাঠানোর আদেশ দেন।
আদালত কক্ষ থেকে বের করার সময়ও বাশারের বিরুদ্ধে স্লোগান অব্যাহত থাকে। প্রতারণার শিকার এক শিক্ষার্থী নাঈম হাওলাদার বলেন, “আমার বাবা সুদে টাকা এনে দিয়েছিলেন খায়রুল বাশারকে। বিদেশে তো নেয়ইনি, টাকাও ফেরত দেয়নি। এখনো সেই সুদের টাকা শোধ করতে হচ্ছে।”
thebgbd.com/NA