ইসলামে মিথ্যা বলা একটি গুরুতর পাপ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। কোরআন ও হাদিসে মিথ্যাবাদীদের জন্য কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে, যা দুনিয়া ও আখিরাত উভয় ক্ষেত্রেই ভোগ করতে হবে।
কোরআনে আল্লাহ বলেন, "নিশ্চয়ই আল্লাহ মিথ্যাবাদী ও কাফের ব্যক্তিকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।" (সূরা যুমার: ৩)। এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বলে, তারা আল্লাহর রহমত ও সঠিক পথ থেকে বঞ্চিত হয়।
আরেকটি আয়াতে বলা হয়েছে, "ধ্বংস তাদের জন্য, যারা মিথ্যা বলে।" (সূরা যারিয়াত: ১০)। এই আয়াত থেকে স্পষ্ট যে, মিথ্যাবাদীদের জন্য আল্লাহর কঠোর শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে।
হাদিসেও মিথ্যার শাস্তি সম্পর্কে কঠোর সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "তোমরা মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকো, কারণ মিথ্যা অন্যায় কাজের দিকে নিয়ে যায়, আর অন্যায় কাজ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়।" (সহিহ মুসলিম: ২৬০৭)।
একটি দীর্ঘ হাদিসে বর্ণিত আছে, নবী (সা.) এক রাতে স্বপ্নে দেখলেন যে, কিছু লোকের মুখ চেরা হচ্ছে লোহার কাঁটাযুক্ত শলাকা দিয়ে। তিনি জিজ্ঞাসা করলে ফেরেশতারা বললেন, "এরা মিথ্যাবাদী, যারা মিথ্যা বলত এবং তাদের সেই মিথ্যা চারদিকে ছড়িয়ে যেত। কিয়ামত পর্যন্ত এভাবেই তাদের শাস্তি চলতে থাকবে।" (সহিহ বুখারি: ৭০৪৭)।
মিথ্যাবাদীদের জন্য দুনিয়াতেও কঠিন শাস্তি রয়েছে। মিথ্যাবাদী ব্যক্তি সমাজে বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়, তার কথার কোনো মূল্য থাকে না, এবং একসময় কেউ তাকে বিশ্বাস করে না। রাসুল (সা.) আরও বলেছেন, "একজন ব্যক্তি মিথ্যা বলতে থাকে, অবশেষে সে আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদী হিসেবে লিখিত হয়ে যায়।" (সহিহ বুখারি: ৬০৯৪, সহিহ মুসলিম: ২৬০৬)।
মুনাফিকদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মিথ্যাচার। রাসুল (সা.) বলেছেন, "মুনাফিকের তিনটি চিহ্ন রয়েছে: যখন কথা বলে, তখন মিথ্যা বলে; যখন প্রতিশ্রুতি দেয়, তখন ভঙ্গ করে; এবং যখন তার কাছে আমানত রাখা হয়, তখন খেয়ানত করে।" (সহিহ বুখারি: ৩৩)। মিথ্যা বলা মুনাফিকদের অন্যতম লক্ষণ হওয়ায়, এটি ঈমানদারের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক অভ্যাস।
মিথ্যার কারণে মানুষ পার্থিব শান্তি হারায়, অন্তরে অশান্তি অনুভব করে এবং ধীরে ধীরে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়। আখিরাতে তাদের জন্য কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে, যা জাহান্নামের আগুনের আকারে আসতে পারে। ইসলামে মিথ্যার এত কঠোর শাস্তির উল্লেখ থাকার কারণ হলো, এটি ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং মানুষকে সত্যের পথ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। তাই একজন মুসলমানের উচিত সর্বদা সত্য কথা বলা এবং মিথ্যা থেকে নিজেকে দূরে রাখা।
thebgbd.com/NIT