সুদানের বৃহত্তর খার্তুমে শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলায় কমপক্ষে ৫৬ জন নিহত হয়েছে। চিকিৎসা সূত্র ও অ্যাক্টিভিস্টদের বরাত দিয়ে এএফপি এ তথ্য জানিয়েছে।
চিকিৎসা সূত্রের তথ্যমতে, ওমদুরমানের একটি ব্যস্ত বাজারে র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) গোলাবর্ষণে ৫৪ জন নিহত হয়েছে। শহরের আল-নাও হাসপাতাল আহত মানুষে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।
এদিকে, নীল নদের ওপারে আরএসএফ নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বিমান হামলায় দুইজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় জরুরি প্রতিক্রিয়া সংস্থা ইআরআর।
২০২৩ সালের এপ্রিলে শুরু হওয়া সুদানের সামরিক সংঘাত ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সরকারি সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফের মধ্যে চলমান লড়াইয়ে হাজারো মানুষ নিহত এবং এক কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, গোলাবর্ষণের মূল আঘাত পড়েছে ওমদুরমানের একটি সবজি বাজারে, যার ফলে ব্যাপক প্রাণহানি হয়েছে। অন্যদিকে, আল-নাও হাসপাতালের এক স্বেচ্ছাসেবক জানিয়েছেন, আহতদের সেবা দিতে কাফন, রক্তদাতা ও স্ট্রেচারের সংকট দেখা দিয়েছে। হাসপাতালটি বারবার হামলার শিকার হয়েছে।
রাজধানী খার্তুমে কয়েক মাস ধরে স্থবিরতা বজায় থাকার পর সম্প্রতি সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি পুনরুদ্ধার করেছে এবং আরএসএফকে শহরের উপকণ্ঠের দিকে ঠেলে দিয়েছে। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গোলাবর্ষণটি পশ্চিম ওমদুরমান থেকে চালানো হয়েছে, যেখানে এখনো আরএসএফের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
এ ঘটনার একদিন আগে আরএসএফ কমান্ডার মোহাম্মদ হামদান দাগলো সেনাবাহিনীকে রাজধানী থেকে সরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের আগেও তাড়িয়ে দিয়েছিলাম, আবারও তাড়াব।’
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে খার্তুম তার আগের রূপ হারিয়েছে। ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত কেবল রাজধানীতেই ২৬ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে বলে লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিনের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ছাড়া জাতিসংঘের তথ্যমতে, অন্তত ৩৬ লাখ মানুষ খার্তুম ছেড়ে পালিয়েছে। যুদ্ধের কারণে শহরের বিশাল অংশ পরিত্যক্ত হয়ে গেছে এবং যোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।
এদিকে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন তার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সুদানের সেনাবাহিনী প্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে স্কুল, বাজার ও হাসপাতালের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ তোলে। পাশাপাশি, সুদানের দারফুর অঞ্চলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আরএসএফ নেতা দাগলোর বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, দাগলোর বাহিনী সেখানে ‘জাতিগত নিধন’ চালিয়েছে।