ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় ‘পেডোফিল’-এর বিচার শুরু

অভিযুক্ত প্রাক্তন চিকিৎসক জোয়েল লো স্কোয়ারনেক মূলত শিশু, নাবালিকা রোগীদের ধর্ষণ ও যৌন হেনস্থা করতেন।
  • অনলাইন ডেস্ক | ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় ‘পেডোফিল’-এর বিচার শুরু তার বিচার হবে বন্ধ দরজার ভেতরে।

ফ্রান্সের একজন প্রাক্তন শল্য চিকিৎসকের (সার্জন) বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৩০০ শিশুকে ধর্ষণ এবং যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে, যাদের বেশিরভাগই তার রোগী ছিল। তদন্ত-নথি অনুসারে, বালক এবং বালিকা-উভয়কেই তাদের হাসপাতালের ঘরে একা থাকা অবস্থায় যৌন নির্যাতন করে। দীর্ঘ তদন্ত প্রক্রিয়ার পর ৭৪ বছর বয়সি এই ডাক্তারের বিচার শুরু হয়েছে সোমবার (২৪শে ফেব্রুয়ারি) থেকে ৷ বিগত কয়েক বছর তদন্তকারীরা তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে, তার নোটবুকগুলি ঘেঁটে এবং এমন নোট খুঁজে পেয়েছেন যেখানে অভিযুক্ত নিজেকে একজন শিশু-আসক্ত যৌনকর্মী হিসেবে বর্ণনা করেছে এবং তার কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।


অভিযুক্ত প্রাক্তন চিকিৎসক জোয়েল লো স্কোয়ারনেক মূলত শিশু, নাবালিকা রোগীদের ধর্ষণ ও যৌন হেনস্থা করতেন। তার বিরুদ্ধে ১১১টি ধর্ষণ এবং ১৮৯টি যৌন হেনস্থার অভিযোগ রয়েছে। শিশুরাই মূলত তার শিকার হয়েছে। ৩০০ নির্যাতিতার মধ্যে ২৫৬ জনের বয়স ছিল ১৫ বছরের নীচে। তাদের গড় বয়স ছিল ১১ বছর। নির্যাতিতাদের মধ্যে একবছরের শিশুও রয়েছে। ১৯৮৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে জোয়েল যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ ও যৌন হেনস্থার ঘটনাগুলো ঘটিয়েছেন। সেই সময় সময় তিনি পশ্চিম ফ্রান্সের বেশ কয়েকটি হাসপাতালে কাজ করতেন। সেখানেই এই কুকীর্তি ঘটাতেন।


পুলিশ আরও জানিয়েছে, নির্যাতিতাদের মধ্যে তার দুই খুদে আত্মীয়ও রয়েছে। এই ঘটনায় ২০২০ সালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৫ বছরের কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করা হয় সে সময়। ২০১৭ সালে ৬ বছর বয়সী এক প্রতিবেশী নাবালিকা চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করলে এই চিকিৎসকের আসল রুপ প্রকাশ পায়। ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো এক কিশোরী অভিযোগ করলে তার বিরুদ্ধে শুরু হয় তদন্ত। এরপর আরও একাধিক নির্যাতিতা থানায় গিয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। যৌন হেনস্থার কয়েক দশক পর অনেকেই মুখ খোলেন তার বিরুদ্ধে। একের পর এক অভিযোগ আসতে থাকে, যা গোটা ফ্রান্সকে নাড়িয়ে দেয়!


দীর্ঘ ২৫ বছর শল্যচিকিৎসক (সার্জন) হিসেবে কাজ করা অভিযুক্ত স্কাউরনেক আদালতে নিজের অপরাধ স্বীকার করে বলেছেন, ৩০ বছর হাসপাতালে শিশুদের ধর্ষণ করেছে সে। তবে সব ক্ষেত্রে নিজেকে দোষীও মনে করে না সে। তার কথায়, ‘জানি এই আঘাতগুলি অপূরণীয়। সেই সময়ে আর ফিরে যেতে পারব না। এই সকল মানুষ এবং তাদের প্রিয়জনরা যে আঘাত আমার হয়ে সহ্য করেছেন তার জন্য তাদের কাছে ঋণী।’


অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হলে তার ২০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। নিজের কাজ ও দায়িত্ব অপব্যবহার করে চার শিশুকে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ফ্রান্সের এক আদালত জোয়েলকে দোষী সাব্যস্ত করে। দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তিনি যে ১৫ বছর কারাদণ্ড ভোগ করছেন তার সঙ্গে এই বাড়তি কারাবাসের সাজা যুক্ত হতে পারে।  তদন্তে একের পর এক কুকীর্তি সামনে আসতে থাকে অভিযুক্তের। 


তার বিরুদ্ধে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে বন্ধ দরজার ভিতর। যারা সাক্ষ্য দেবেন তারা শিশু বয়সে জোলের নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। যেসব রোগীকে যৌন নিপীড়ন করার অভিযোগ উঠেছে, তাদের অনেকেই শিশু এবং বেশির ভাগ রোগীকে তিনি অচেতন অবস্থায় যৌন নিপীড়ন করতেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। কিছু ভুক্তভোগীদের এই ডাক্তারের আক্রমণের কথা মনে নেই, কারণ তারা তখন অজ্ঞান ছিলেন। ত্রিশের কোঠায় বয়সী একজন ব্যক্তি স্বীকার করেছেন, ১৯৯৫ সালে যখন তিনি ছোট ছিলেন, তখন একটি কনসাল্টেশনের সময় তাকে যৌন হেনস্থা করা হয়।


চিকিৎসকের ঘর থেকে তিন লক্ষেরও বেশি পর্ন ছবি, প্রচুর সেক্স টয়, শিশুদের সঙ্গে সঙ্গমের ছবি উদ্ধার করে পুলিশ। জোয়েল যৌনকর্মে ওই সেক্সটয়গুলো ব্যবহার করতেন বলে পুলিশ রিপোর্টে উল্লেখ করে। একটি ডায়েরিতে নির্যাতিতাদের নাম লিখে রেখেছিল সে। সেখানেই উল্লেখ রয়েছে, একাধিক নাবালিকাকে অপারেশন টেবিলেও যৌন হেনস্থা করে সে। বারবার যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠার পর ভিন্ন শহরে গিয়ে হাসপাতালে কাজে যোগ দিত সে। তার কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন প্রাক্তন স্ত্রীও।


সূত্র: রয়টার্স, এপি. এএফপি


এসজেড