ঢাকা | বঙ্গাব্দ

প্রতিদিনই রাখাইন থেকে রোহিঙ্গারা আসছে

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে দলে দলে বাংলাদেশে ঢুকছে রোহিঙ্গারা।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ১০ মে, ২০২৫
প্রতিদিনই রাখাইন থেকে রোহিঙ্গারা আসছে ছবি : সংগৃহীত।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে দলে দলে বাংলাদেশে ঢুকছে রোহিঙ্গারা। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এবং কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তের কোনো না কোনো পথ দিয়ে প্রতিদিনই ৩০-৪০ জন রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটছে। ঢুকে পড়া রোহিঙ্গারা উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয়শিবিরের বিভিন্ন শেল্টার ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়।


কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, কোনো না কোনোভাবে প্রতিদিনই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে জান্তা সরকারের সঙ্গে আরাকান আর্মির যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে যাওয়ার পর রোহিঙ্গা-অধ্যুষিত টাউনশিপগুলোয় হামলা শুরু হয়। হামলার মুখে আবারও রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে।


আরআরআরসি কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১ মে পর্যন্ত নতুন করে আসা রোহিঙ্গার মধ্যে ১ লাখ ১৮ হাজারের মতো রোহিঙ্গার নিবন্ধন শেষ হয়েছে। নিবন্ধনের অপেক্ষায় আছে আরও ৩৫ থেকে ৪০ হাজার রোহিঙ্গা। এদের মধ্যে বড় অংশ এসেছে গত বছরের মে, জুন ও জুলাই মাসে। আশ্রয় নেওয়া এই রোহিঙ্গাদের আবাসনের জন্য জায়গা চেয়ে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছে। তবে সরকার এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।


নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের আবাসনের জন্য উখিয়া ও টেকনাফে কোনো খালি জায়গা নেই জানিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতি ও বড় রোহিঙ্গা ক্যাম্প কক্সবাজারে। পাহাড়ি জায়গায় অবস্থিত এসব ক্যাম্পে নতুন করে আবাসন দেওয়ার সুযোগ নেই।


যেসব পথে আসছে রোহিঙ্গারা


বাংলাদেশের সঙ্গে থাকা মিয়ানমারের জল ও স্থলপথের ২৭১ কিলোমিটার সীমান্তের পুরোটাই রাখাইন প্রদেশের সঙ্গে। ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর এ রাজ্যের ১৭টি টাউনশিপের মধ্যে মংডুসহ ১৪টি টাউনশিপ মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। ইউএনএইচসিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, রাখাইনে সংঘাতের কারণে মংডু ও আশপাশের টাউনশিপগুলোয় চরম খাদ্য ও নিরাপত্তা সংকট চলছে। কোনো অসুস্থ মানুষ চিকিৎসাসেবা কিংবা ওষুধ পাচ্ছে না। এ কারণে রোহিঙ্গারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে।


সীমান্তের একাধিক সূত্র বলেছে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম, কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী এবং টেকনাফের হোয়াইক্যং, হ্নীলা ও সাবরাং ইউনিয়নের ২২-২৪টি পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন রোহিঙ্গারা দালালের মাধ্যমে ঢুকছে। দালালেরা নতুন আসা রোহিঙ্গাদের টেকনাফ ও উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে পৌঁছে দেয়। কেউ কেউ বিভিন্ন বাসাবাড়িতেও আত্মগোপন করছে।


রাখাইনের মংডু থেকে পরিবার নিয়ে পালিয়ে এসেছেন আবদুল কাদের (৪৫) ও মোহাম্মদ শফি (৫০)। তাঁরা উখিয়ার কুতুপালংয়ের একটি আশ্রয়শিবিরে অবস্থান করছেন। রাখাইনের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁরা বলেন, আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের বাড়িছাড়া করতে নির্যাতন চালাচ্ছে। আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে অনেককে ধরে নিয়ে গুলি করেও মারা হচ্ছে।


আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মো. জুবায়ের বলেন, আরাকান আর্মি জাতিগত নিধন চালাচ্ছে। প্রায় সাড়ে ৩ লাখ রোহিঙ্গা এখনো রাখাইনে আছে। তারা খাদ্য ও নিরাপত্তা-সংকটে পড়েছে।


বিজিবি টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগর বরাবর কঠিন নজরদারি থাকায় রোহিঙ্গারা সংঘবদ্ধ পাচারকারীদের সহায়তায় দুর্গম পাহাড়ি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। গত চার মাসে নাফ নদী ও সাগরপথ দিয়ে দৃশ্যমান অনুপ্রবেশ ঘটেনি। তবে অনুপ্রবেশের চেষ্টার সময় বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে আটক করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে।


১২ মে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক কক্সবাজারে


রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, সীমান্ত পরিস্থিতি ও মাদক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে আগামী সোমবার কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের সভা ডাকা হয়েছে। সভায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজমের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়নবিষয়ক) লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ, প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান, বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী, বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।


thebgbd.com/NA