ঢাকা | বঙ্গাব্দ

প্রতিষ্ঠার ৭ বছরেও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেননি নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

জেলা শহরের উপকণ্ঠে রাজুর বাজারের টিটিসি ক্যাম্পাসে অস্থায়ীভাবে ২০১৮ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়টি।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ১০ আগস্ট, ২০২৫
প্রতিষ্ঠার ৭ বছরেও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেননি নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাফেটেরিয়া ও টিএসসির কাজ শেষ হওয়ায় সেখানেই ৭ ব্যাচের ক্লাস কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

প্রতিষ্ঠার সাত বছরেও নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হয়নি। কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) অস্থায়ী ক্যাম্পাসেই চলছে পাঠদান। শুরু থেকেই নানা অনিয়ম দুর্নীতির কারণে আটকে আছে একাডেমিক ভবনের কাজসহ ক্যাম্পাস অবকাঠামো নির্মাণ কাজ। একাধিকবার পরিবর্তন হয়েছেন প্রকল্প পরিচালকও। তবে সব সংকট কাটিয়ে সীমিত অবস্থার মধ্যেই নতুন ব্যাচের পদযাত্রার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে যাওয়ার আশা কর্তৃপক্ষের।


জেলা শহরের উপকণ্ঠে রাজুর বাজারের টিটিসি ক্যাম্পাসে অস্থায়ীভাবে ২০১৮ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশাল বাজেটে নেত্রকোনা মোহনগঞ্জ সড়কের পাশে ৫০০ একর জায়গা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ আর বালু ফেলা ছাড়া দৃশ্যমান হয়নি কোনো কাজই।


অবশেষে ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট পতনের পর শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ‘শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়’ নামের পরিবর্তে ‘নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয়’ নামকরণের মধ্য দিয়ে সীমিত বাজেটে কাজের অগ্রগতি বাড়ানো হয়।

 

সবশেষে মাত্র দুটি ভবনের কাজ দৃশ্যমান হলেও ততোদিনে প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থীদের স্নাতক শেষ হয়ে যায় অস্থায়ী (টিটিসি) ক্যাম্পাসেই। যার জন্য বিঘ্নিত হয়েছে টিটিসির প্রশিক্ষণ কার্যক্রমেও।

 

এদিকে, পতিত সরকারের দলীয় সিন্ডিকেট, কতৃপক্ষের দুর্নীতিসহ সব কিছু মিলিয়ে কচ্ছপ গতিতে কাজ চলায় অনিশ্চয়তায় ফেলে দেয় একাডেমিক, প্রশাসনিক ভবনসহ সব অবকাঠামো নির্মাণ কাজ। মাটি ভরাটের কাজে কংশ নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যার জন্য কংশ নদীতে ভাঙনের সৃষ্টি হয়।

 

এলাকবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক জেলা প্রশাসক বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে সাময়িক ব্যবস্থা নিলেও পতিত সরকারের প্রভাবশালীদের ক্ষমতায় তর বদলি হয়। বেশ কয়েকবার ঘটা করে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও প্রতিমন্ত্রী নওফেলসহ বিভিন্নজনের পরিদর্শন কর্মসূচির নামে ভাগাভাগি হয় দুর্নীতির অর্থ। 

 

এসব ঘটনা নিয়ে মুখ খুললেই বিপদে পড়তে হতো শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষকে। ঘটেছে এলাকাবাসীর সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের হামলা পাল্টা হামলার ঘটনাও। কাজের কোনো নাম নেই। অবকাঠামো নির্মাণ কাজ ফেলে রেখে নানা কার্যক্রম চালিয়ে গেছে তৎকালীন প্রশাসন ও দলীয় ঠিকাদাররা। এরপর ৫ আগস্টের পর পট পরিবর্তনে প্রথমেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন হয়। এরপর বাজেটও বাতিল হয়ে যায়।

 

কিন্তু এসব সংকট কাটিয়েই বাতিল হওয়া বিশাল বাজেটের পরিবর্তে নতুন কর্তৃপক্ষ পুনরায় ৬৪৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যায়ে (২০২৪-২৫) উদ্যোগ নেন। এরইমধ্যে ক্যাফেটেরিয়া ও টিএসসির কাজ শেষ হওয়ায় সেখানেই শুরু করতে যাচ্ছে আগামী ৭ ব্যাচের ক্লাস কার্যক্রম। তবে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের দাবি, বিশাল একটি শিক্ষাঙ্গনের এমন দুর্নীতি সন্ত্রাসের বিরদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হোক। যাতে শিক্ষা নিয়ে আর কেউ অনিয়ম করতে সাহস না পায়।

 

দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী রিফাত রেদোয়ান জয় বলেন, ‘যেহেতু এবার শিক্ষকদের ভেতর থেকে পিডি নিয়োগ হয়েছে, এখন আশা করা যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি মায়া কাজ করবে আর দ্রুত কাজ এগুবে।’

 

তৃতীয়বারের প্রকল্প পরিচালক বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড আনিছা পারভীন বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নিয়েই কিছু সমস্যা পেয়েছি। কাজের ধীরগতির জন্য ঠিকাদাররা দায়ী। করোনার সময় জনবল কম ছিল। এগুলো আইডিন্টিফাই করা হয়েছে। এরইমধ্যে জনবল নিয়োগসহ নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দ্রুত বাকি কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। আমরা কাজের গাফিলতির জন্য টার্মিনেট করেছি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. খন্দকার মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম মুনিম বলেন, ‘স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে নেত্রকোনায় এটি অনেক বড় ক্যাম্পাস, যা বিপুল সম্ভবনার। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সত্য যে, যা হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। খুব গুরুত্বপূর্ণ ভবন একাডেমিক ভবনের কাজসহ একটিও হয়নি। যা গত সময়ের মধ্যে সহজেই হওয়ার কথা ছিল। আমরা দ্বায়িত্ব নিয়েই নানা জটিলতায় পড়ে এখন নিয়মতান্ত্রিক অনুমোদনের অপেক্ষায়।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘হঠাৎ করে সরকারের এডিশনাল একজন কর্মকর্তা যিনি পিডি ছিলেন, তিনি কিছু না বলে চলে গেলেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিপাকে পড়েছি। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকেই একজনকে পিডি করা হয়। যার দরুণ আমরা এখন দ্রুত এগোনোর চেষ্টা করছি।’

 

এসব জটিলতা কাটিয়ে রিভাইস ডিপিপি পাস হয়ে এলে সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে বলেও জানান উপাচার্য।

 

তিনি বলেন, ‘এবারের ৭ ব্যাচের শিক্ষার্থীদেরকে আমরা কোনোভাবে ক্যাম্পাসেই তুলতে চাচ্ছি। যেমন নির্মাণ হওয়া ক্যাফেটেরিয়া ভবনে আপাতত আমরা ক্লাসরুম হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করছি। যাতে নিজস্ব ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে পারে শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও টিএসসিতেও আমরা গুছাচ্ছি।’

 

যারা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তাদের টার্মিনেট করা হয়েছে জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেবে। টাকা এরইমধ্যে সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে। যারা কমিটমেন্ট করবে তাদের হয়তো সুযোগ দেবো। নয়তো নতুন করে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা বাকি কাজগুলো দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করবো।’

 

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩ মার্চ মোট ১২টি প্যাকেজে প্রথম পর্যায়ে ২৫৮১ কোটি টাকার টেন্ডার হয়েছিল গত ২০২৪ মেয়াদ পর্যন্ত। যার মধ্যে ২৩৯ কোটি টাকায় জমি অধিগ্রহণ হয়। ডিসেম্বর (২০২৪-২০২৫) পর্যন্ত বর্তমানে ৬৪৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যায়ে বাকি কার্যক্রম চলমান। মোট চারটি বিভাগে ৫৩৫ শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে পাঠদান। ১১টি বিভাগের প্রস্তাবনা দেয়া রয়েছে।


thebgbd.com/NIT